মো. আব্দুল কাইয়ুম : কখনও সরাসরি দেখিনি ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত শাহ আবিদ হোসেনকে। তাও বলতে হচ্ছে; হ্যাঁ দেখেছি। তবে সেটা চোখে না, মন থেকে দেখেছি ও অনুধাবন করেছি সবসময়। আর হ্যাঁ,আমি এখনই লিখছি। ইতোপূর্বে লিখিনি। কারণ, তিনি ময়মনসিংহ থেকে বিদায় নিয়ে যুগ্ম কমিশনার হয়ে চলে যাচ্ছেন ডিএমপিতে। মফস্বল ছেড়ে রাজধানীতে প্রবেশ করায় তাঁকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। ময়মনসিংহবাসীর শাহ আবিদ হোসেন ময়মনসিংহ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সেজন্য ময়মনসিংহবাসীর কষ্ট হবে তবুও উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য বিদায় বেলায় নিরীহ ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে শুভ কামনা রইলো।
একটা কথা বলে নেই। ছলচাতুরীদের মতো কোন কর্মকর্তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে লিখে দপ্তরে দপ্তরে কখনও ঘুরি নাই। আর ঘুরার ইচ্ছেও নাই। আর কর্মস্থলে থাকা অবস্থায় কাউকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে স্টোরি করার পক্ষেও আমি নই। তাই কেউ যখন কর্মস্থল ত্যাগ করেন তখন একজন নিরপেক্ষ দর্শক হিসেবে ইতোপূর্বে যা দেখেছি তা নিয়েই মতামত দিতে পছন্দ করি। যদিওবা একজন মানবাধিকার কর্মী বা একজন সাংবাদিক হিসেবে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে সময় কাটাতে পারি বা পারতাম। আর হ্যাঁ, অনেকেই এই লেখাটি পড়ে নিশ্চয়ই বলবেন-আমি কি করে পুলিশের প্রশংসা করছি! আর তাদের জন্য বলছি, পুলিশ আপনার, আমার বন্ধু। পুলিশকে কতিপয় অসাধূ লোকজন মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। যেমনটা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে। আমাকে পুলিশ গত ১১ মে একজন ব্যক্তির দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগে মোমনেশাহী ডিএস কামিল মাদ্রাসার সামনে থেকে আটক করে। এখানে আমি পুলিশের দোষের কিছু দেখছি না। আর যিনি মামলাটি করেছিলো- ওই সম্মানীত ব্যক্তি ইতোমধ্যে তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। হাইকোর্ট থেকে আমার জামিন হওয়ার একদিন আগেই বাদী নিজে জজ কোর্টে দাঁড়িয়ে আমার জামিন করিয়েছেন। সেজন্য আমি আমার বাদীকে সবসময়ই ধন্যবাদ দেই। সুতরাং-আমি বলতে চাই, এই লেখাটি আমার একান্তই ব্যক্তিগত অভিমতের ভিত্তিতে লিখেছি।
যাই হোক, ২০১৮ সালের ১৪ আগষ্ট ময়মনসিংহে যোগদান করেন শাহ আবিদ হোসেন। যোগদানের পর কুমিল্লার একজন পুলিশ অফিসারের সাথে কথা হয়। তিনি তখন আমাদের এই শাহ আবিদ হোসেন সম্পর্কে আমাকে বলেন। তিনি একটা কথাই বলেছিলেন যে, ‘‘স্যার (শাহ আবিদ হোসেন) আপনাদের ময়মনসিংহে গেছেন, দেখবেন পরিবর্তন কাকে বলে ’’। সত্যিই তিনি ময়মনসিংহে যোগদানের পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে ময়মনসিংহের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। জেলায় মাদক, ছিনতাই ও বিভিন্ন ধরণের অপরাধ প্রবণতা কমে যায় অনেকাংশে। মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং প্রতিরোধে জেলা পুলিশের সহযোগীতা পেয়েছেন অসংখ্য ভুক্তবোগী। জেলা পুলিশকে আধুনিকায়ন করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ এ পুলিশ সুপার জেলা পুলিশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিয়েছেন অনেকদূর। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের কার্যক্রম জেলাবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। শহরের যানযট নিরসনে রয়েছে তার অবদান। ঈদে ঘরমুখী মানুষদের কষ্ট লাগবে তিনি নিজে রাস্তায় নেমেছেন। নারী নির্যাতন বন্ধে চালু করেছেন জেলা পুলিশের “নারী নির্যাতন সেল”। অল্প সময়ে বিভিন্ন হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে রয়েছে তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও কঠোর নির্দেশনা। অবৈধ ও নিবন্ধনহীন যানবাহন চলাচলে কঠোরতা অবলম্বন করেছেন। অতীতের ইতিহাস ভঙ্গ করে ট্রাফিক বিভাগের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে জমা করেছেন রাজস্ব। এমনি আরো কতো কাজ করেছেন। তাঁর এমনসব কাজ ময়মনসিংহকে অপরাধমুক্ত আদর্শ জেলা গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।
আমি যতদূর শুনেছি, ওনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র ছিলেন। হয়তবা সেজন্যই ওনি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে যেতে পেরেছেন সহজে। সাধারণ মানুষকে পৌছে দিতে পেরেছেন পুলিশের সেবা। শুধু তাই নয়, তিনি একজন সাংস্কৃতিকমনা পুলিশ অফিসারও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যতটুকু দেখেছি তাতে মনে হয় ওনি আসলেই একজন মেধাবী ও চৌকস পুলিশ অফিসার। শাহ আবিদ হোসেন কুমিল্লা বা ময়মনসিংহের গর্ব না। সারা বাংলাদেশের গর্ব। ময়মনসিংহ থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই পুলিশ অফিসারের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন সব সময়।
লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী