জাবি : আন্দোলন দমাতে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশীর অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভিসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশীর নামে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন অন্তত পাঁচজন সংগঠকের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে ‘হয়রানি’ করেছে বলে সোমবার গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন তারা। এদিকে, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আবারো জাবির ভিসি বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ করবে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীরা জানান, জাবিতে কারা কারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন একটি তালিকা করে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী এখন গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, এই তালিকায় প্রথম দিকেই নাম রয়েছে জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক, দফতর সম্পাদক হাসান জামিল, কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক রনি, ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিক উস সালেহিন।

আরিফুল ইসলাম অনিক জানান, ‘আমার বাসায় পুলিশ গিয়েছিল। এতে আমার পরিবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া আমাদের আরো কয়েকজনের বাসায় পুলিশ গেছে। রাষ্ট্র কোনো বিষয়ে তদন্ত করতে চাইলে তার একটা নিয়ম আছে। কিন্তু পুলিশ দিয়ে পরিবারকে এ ধরনের হয়রানি করবে কেন? আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি এবং প্রতিকার চাচ্ছি।’

মুশফিক উস সালেহিন জানান, ‘পুলিশ আমার নানা বাড়িতে গিয়ে আমার পরিবারের বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে। এরপর থেকে আমার পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত। আমার পরিবার আমার নিরাপত্তা নিয়েও এখন চিন্তিত। আমাদের ধারণা ভিসি ঊর্ধ্বতন কারো সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করছে। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করা নিন্দনীয়।’

একইভাবে বাসায় পুলিশ যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাকিবুল হক রনি ও শোভন রহমান।

এ বিষয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘এভাবে আন্দোলনকারীদের বাসায় যাওয়া মোটেই ঠিক নয়। এতে তাদের পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধন থাকতে পারে।’ আন্দোলনকে দমানোর একটি অপকৌশল হিসেবেই এসব করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে অবগত নয় জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পরেও তারা আইন অমান্য করে ক্যাম্পাসে মিছিল-মিটিং করছে। আর তাদের গ্রামে কী হচ্ছে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত নয়।’

এদিকে, এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ। যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল এবং সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, ‘সকল তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর পরও ভিসি ফারজানা ইসলামকে রক্ষার জন্য একের পর এক অবৈধ কাজ করে যাচ্ছে সরকার। আন্দোলনকারীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে ও পরিবারের লোকজনদের সাথে খারাপ আচরণ ও তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এই দমন নীতি বন্ধ না করলে এই আন্দোলন আরো বৃহত্তর রূপ নেবে। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের দমন-পীড়ন চালানো হলে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে দাঁড়াবে।’

Share this post

scroll to top