বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সভ্য দুনিয়ায় এক কলঙ্কজনক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
ইতিহাসের এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ মূলত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। এরফলে জাতির উপরে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ চেপে বসেছে। সেদিন দেশ, জাতি ও ইসলামের দুশমনরা চেয়েছিল জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে জামায়াত ও এদেশের ইসলামী আন্দোলনকে চিরদিনের জন্য দুর্বল ও ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু তারা জানে না জেল, জুলুম-নির্যাতন ও হত্যা করে কোনো আদর্শবাদী দলকে দাবিয়ে রাখা যায় না।
শহীদানের রক্ত কখনো বৃথা যায়না বরং শহীদদের রক্তের পথ ধরেই আদর্শবাদী আন্দোলনের বিজয় সূচিত হয়। তিনি দেশপ্রেমিক ইসলামপ্রিয় জনতাকে নিজেদের ঈমান ও সাহসিকতার চেতনাকে শাণিত করে দেশ, জাতি ও ইসলামের বিরুদ্ধে সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকে রুঁখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
তিনি ২৮ অক্টোবরের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আজ সকালে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার পৈশাচিক হামলায় শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আ.জ.ম রুহুল কুদ্দুস, কামাল হোসাইন, এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন, শাহীন আহমদ খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সরকার ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা কোমলমতি মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে হিন্দুত্ববাদী এবং ইসলাম বিরোধী বিবর্তনবাদ শিক্ষা দিয়ে তাদের ঈমান ধ্বংসের পায়তারা করছে। বর্তমান আওয়ামী সরকার জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়নি বলেই দেশ ও জাতির প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই।
ক্ষমতাসীনদের নির্লিপ্ততার কারণে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। গণবিচ্ছিন্ন এই সরকার নিজেদের অপকর্ম ও দুর্নীতি ঢাকার জন্য দেশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার ক্ষত না শুকাতেই ভোলায় নবীপ্রেমিক জনতাকে হত্যা করে সরকার তার দেশবিরোধী চুক্তি সমুহকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
এদেশের মানুষ অতিতে কখনো আধিপত্যবাদী শক্তিকে মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও মেনে নিবেনা। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ২৮ অক্টোবরের শোককে শক্তিকে পরিণত করে এবং দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি সকলকে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে এই ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী পৈশাচিকতা ও নারকীয় হত্যাকাণ্ড জাতির সব অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে সাপের মতো মানুষ পিটিয়ে হত্যা ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতন্ত্র ও আধিপত্যবাদী অপশক্তির সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের অংশ।
ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে সাংবিধানিক ও আইনের শাসনের পরিবর্তে দেশকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই লগি-বৈঠার নারকীয় তাণ্ডব চালায়। বিশ্ব ইতিহাসের নির্মম, নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক এই ঘটনার দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি বরং বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ক্ষমতার দাপটে সরকার মামলা প্রত্যাহার করে খুনিদের পুরস্কৃত করেছে, যা সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।
মানবিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ঘাতকদের বিচারের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ দেশের জনগণই একদিন ২৮ অক্টোবরের হত্যাকারীদের বিচার করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, ইনশাআল্লাহ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ২৮ অক্টোবরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এটি ছিল দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এদিন আওয়ামী সন্ত্রাসী ও তার বাম শরীকরা পরিকল্পিতভাবে লগি-বৈঠার দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে নারকীয় তাণ্ডব চালায় এবং রাজধানীর পল্টনে ৬ জন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে দানবীয় উন্মততাই মেতে ওঠে।
তারা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং শহীদদের লাশের উপর নৃত্য করে। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে এভাবে মানুষ পিটিয়ে হত্যা সকল নির্মমতাকে হার মানিয়েছে এবং যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশের জনগনকেই নয় বিশ্বের কোটি কোটি বিবেকবান মানুষকে হতবাক করে দিয়েছিল।
এই নির্দয়, নিষ্ঠুরতা দেখে কেঁদেছে বাংলাদেশ, কেঁদেছে বিশ্বমানবতা অথচ কাঁপেনি সন্ত্রাসীদের হাত ও বুক। তিনি ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২৮ অক্টোবরের শহীদদের রক্তের বদলা নেয়া হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।