সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার আনাচে কানাচে চলছে বাল্য বিয়ের হিড়িক। মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরুতে শিক্ষার্থীদের বাল্য বিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, আইনজীবি, কাজী ও ইমামদের কারসাজিতে হরহামেশায় বাল্য বিয়ে হচ্ছে। এসব বাল্য বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও তারা নিরব ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এতে দিনদিন সাধারণ মানুষের প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
খোজঁ দিয়ে জানা গেছে, শুক্রবারের বন্ধের দিনে ওইসব বিয়ের আয়োজন হয় সবচেয়ে বেশী। পবিত্র ঈদুল আযহার পর পরই উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে দিনদিন একের পর এক বাড়ছে বাল্য বিয়ের প্রতিযোগিতা। এ সকল বিয়ে হচ্ছে বেশীর ভাগ ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্টার অনুযায়ী এদের বয়স ১১ থেকে ১৪ বছর হলেও ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত জন্ম সনদে তাদের বয়স দেখানো হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ বছর। আবার কখনো ইউনিয়ন পরিষদ জন্ম সনদ না দিলেও আইনজীবিদের মাধ্যমে নোটারী পাবলিক এফিডেভিট দিয়ে হচ্ছে এসব বাল্য বিয়ে। চলতি মাসের গত ১৫ দিনের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি বাল্য বিয়ে সংঘটিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এ উপজেলার ২নং সদর ইউনিয়নে চারটি বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিমকে চারটি বিয়ে সম্পর্কে জানানোর পরও বাল্যবিয়ে বন্ধে তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। গত শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গৌরীপুর উপজেলার ২নং ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামে ইলিয়াছ মিয়ার নাবালিক কন্যা শরিফা (১৬) ও আবুল কালামের নাতি লাবনীর (১৪) বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়। এই দুইটি বিয়ের বিষয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক মজিবুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে তথ্য দিলেও কার্যকরী কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে নির্বিঘ্নেই বিয়ে সম্পন্ন হয় বলে এলাকাবাসী জানায়। অপর দিতে গত বৃহস্পতিবার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের মানিক মিয়ার মেয়ে ময়ুরী (১৫) ও সদর ইউনিয়নের চান্দের সাটিঁয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তানজিলা বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। এ ব্যাপারে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা করিম সাংবাদিকদের জানান, কয়েকটি বিয়ের ব্যাপারে একজন সাংবাদিকের এসএমএস পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান ওই কনেদের বয়স পূর্ণ বয়স হয়েছে বলে জানান। এরপর আর খোঁজ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিয়ে হয়ে যাওয়া অন্য কয়েকটির খবর নেওয়া হবে।
সচেতন মহল দাবি করেন, প্রাসন নিরব থাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাল্য বিয়ের সংখ্যা। আইন না মেনে অবাধে বাল্য বিয়ে হওয়াতে একদিকে যেমন স্কুল-মাদরাসা থেকে ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থী অন্যদিকে বাল্য বিয়ের বহু কুফল পরিলক্ষিত হচ্ছে সর্বত্র। অপরিণত বয়সে বিয়ের কারণে সুস্বাস্থ্য, উচ্চ শিক্ষা পরিপূর্ণ সংসার গঠন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক মেয়েরাই। দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে ওদের স্বাস্থ্য। বিয়ের পর স্বামীসহ শশুরালয়ের লোকজনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পাড়ায় তালাক প্রাপ্তা হচ্ছে অনেকেই।