ঋণের দেনা পরিশোধ করতে না পেরে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে বাবা-মেয়ের আত্মহত্যা

রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা ও মেয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা এটিকে আতœহত্যা বলে দাবি করছেন। পুলিশ বলছে, রেলক্রসিং পারাপারের সময় অসতর্কতাবশত ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় তাদের।

আর নিহতের স্ত্রী জানিয়েছেন, ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে প্রিয় মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর ভদ্রা জামালপুর রেলক্রসিং সংলগ্ন এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- নগরীর মতিহার থানার ধরমপুর এলাকার মৃত জাহাঙ্গীর আলম মাখনের ছেলে কামরুজ্জামান রুবেল (৩০) ও তার মেয়ে রুবাইয়া খাতুন (৩)।

রাজশাহী জিআরপি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান জানান, সোমবার দুপুরে রেলস্টেশন থেকে ২টা ১৫ মিনিটের খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি বিলম্ব করে। পরবর্তীতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেটি ভদ্রা জামালপুর রেলক্রসিং অতিক্রম করছিল। সে সময় রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে অসতর্কতাবশত কামরুজ্জামান রুবেল ও তার মেয়ে ট্রেনে কাটা পড়েন। এর মধ্যে রুবেল ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তার শিশুকন্যাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠান। সেখানে শিশুটিরও মৃত্যু হয়

তিনি আরো জানান, আশপাশের লোকজন এটিকে ‘আত্মহত্যা ’ বলে দাবি করলেও ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টির সত্যতা মেলেনি।

একই কথা বলেন জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাঈদ ইকবাল। তিনি জানান, এটি একটি দুর্ঘটনাই। রেলক্রসিংয়ে গিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে রুবেল ও তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এরপরও এ ব্যাপারে আরও তদন্ত করে দেখা হবে। এছাড়া নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় জিআরপি থানা ও রাজপাড়া থানায় পৃথক মামলা হবে বলেও জানান তিনি। নিহতদের মধ্যে রুবেলের লাশ বর্তমানে জিআরপি থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। দ্রুত তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এছাড়া তার শিশুকন্যার লাশ আগে থেকেই সেখানে আছে।

এদিকে, নিহত রুবেলের স্ত্রী আলেয়া বেগম সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামী একজন অটোরিক্সা চালক ছিলেন। সংসারে তাদের দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে নিহত রুবাইয়া তার বাবার প্রিয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দাম্পত্য জীবনে কোন কলহ ছিল না। তবে বিভিন্ন এনজিও এবং সংস্থা থেকে আমার স্বামীর সাতটি লোন নেয়া ছিলো। তার একমাত্র টেনশন হত সপ্তাহে তিন-চারটি এনজিও’র কিস্তি পরিশোধের। সোমবারও তার এক হাজার ৭০০ টাকার দুইটি কিস্তি পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

আলেয়া আরো বলেন, বেলা সোয়া ২টার দিকে আমার মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়েছেন। সেই ম্যাসেজে লেখা আছে, ‘আজ রেললাইনের ওপর দুইটা লাশ পাবা’!

নিহতের স্ত্রী ও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তির টাকা দিতে না পারলে এনজিও অফিস থেকে লোক আসতেন বাড়িতে। তারা বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা হৈ-চৈ করতেন। অসংলগ্ন ও বিব্রতকর কথাবার্তা বলতেন এনজিও’র লোকজন। সোমবারও এনজিও’র লোক বাড়িতে কিস্তি নিতে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই রুবেল তার প্রিয় মেয়ে রুবাইয়াকে নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

Share this post

scroll to top