স্টাফ রিপোর্টার : কুরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, তবলীগের পূর্ববর্তি তিন হযরত (হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ, হযরত মাওলানা ইউসূফ রহ. ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ ) এর উসূল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ময়মনসিংহের সর্বস্তরের উলামা ও ইমামগণ এবং সেই সাথে মাওলানা সাদ পন্থী গ্রæপের নানা অপতৎপরতা ও কার্যক্রম বন্ধেরও দাবী জানিয়েছেন তারা।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহ আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে ময়মনসিংহের সর্বস্তরের লক্ষাধিক উলামা ও ইমামগণের অজেহাদি (স্পস্টকরণ) জোর ও ইসলামী মহাসম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এতে ছয় দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করলে উপস্থিত লাখো ওলামা, ইমাম ও মুসল্লীগণ তার পক্ষে রায় প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। দ্বীন ও দাওয়াতে হকের পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য পেশ করেন কাকরাইল মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বী মাওলানা যোবায়র সাহেব, মাওলানা রবিউল হক, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আনোয়ার শাহ। আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়াীলীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম বলেন ময়মনসিংহ জেলা মার্কাজ মসজিদকে দু’ভাগ, দু’ইমাম নিযুক্ত করে বিভক্ত করা যাবেনা। বর্তমান সুরা মুরুব্বীদের অধীনেই আগের মতোই তাবলীগের কাজকর্ম চলবে। এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটলে জীবন দিয়ে হলেও তা রুখে দাড়াবো। তার সাথে সকলকে শরীক হওয়ার আহবান জানান। একই বিষয় সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, ও সাবেক এমপি দেলোার হোসেন খান দুলু।
মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জীর সভাপতিত্বে এবং মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদীর তত্ত্বাবধানে আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আযহারী, মুফতি সাখাওয়াত হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাওলানা আবুল কালাম, মুফতি মহিবুল্লাহ, মাওলানা মুন্জুরুল হক, মাওলানা মুহম্মদ, মুফতি আব্দুল হাই।
দেশের শীর্ষ আলেমগন বলেন, তাবলীগ জামাতের বিশ্বব্যাপী দাওয়াতী কার্যক্রম প্রায় শতাব্দীকাল থেকে চলে আসছে। বড় বড় বুজুর্গদের জান মালের কোরবাণীর বদৌলতে দাওয়াত ও তাবলীগের এই মেহনতসারা বিশ্বব্যাপীতে ছড়িয়ে পড়েছে।এই মেহনতের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ঈমান, আমল ও চারিত্রিক গুণাবলীর এক বিশাল পরিবর্তনও উন্নতি সাধিত হয়ে একজন মুসলমান বিশ্বের জন্য শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত হচ্ছিলো। আজ সেই মেহনত বিভিন্ন সমস্যায় জড়িত হয়ে মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিবর্গেরমধ্যে বিশৃক্সখলা ও পরস্পর বিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকে মনে করেন এগুলো নিছক দলাদলি বা দখল-বেদখলের ঝগড়া। প্রকৃত কারণ অনেকের কাছে অনেকের কাছে অস্পষ্ট ও অজ্ঞাত।
ওলামা হযরতগণ পরিষ্কারভাষায় বলেন, দাওয়াত ও তাবলিগের এই মহান কাজে বর্তমানে সকল বিরোধ ও বিশৃক্সখলার একমাত্র উৎস হলেন ভারতের দিল্লি নিজামুদ্দীন মারকাজ মসজিদের মাওলানা সাদ কান্ধলভী। তার বিভিন্ন বিতর্কিত ও ভ্রান্ত বয়ান, আচার-আচরণই এ সকল সমস্যাদির উৎপত্তি ঘটিয়েছে। তিনি এখনো তার বিভ্রান্তিকর চিন্তা প্রচারে লিপ্ত রয়েছেন।
ওলামা হযরতগণ আরো বলেন, দারুল উলূম দেওবন্দের উলামায়ে কেরাম তাদেরফতওয়াতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, মাওলানা সাদ সাহেব মনে হয় তাবলিগের নামে নতুন কোন জামাত গঠন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের মূলধারার সকল আলেম উলামা, মসজিদের ইমাম-খতীব এবং ইসলামী স্কলারদের অবস্থান দারুল উলূম দেওবন্দের ফাতওয়ার পক্ষে।
ইতোপূর্বে ময়মনসিংহ কাচারী মসজিদে সভার মাধ্যমে ওলামাগণের অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে। এই ইসলামী মহাসম্মেলন সর্বসম্মতভাবে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে নিন্মোক্ত ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ অন্যতম শীর্ষ ওলামা হযরত মাওলানা আব্দুর রাহমান হাফেজ্জী।
(১) জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন, তিনটি মৌলিক কারণে- ক. কুরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা খ. তাবলিগের গুরুত্ব বুঝাতে তাবলিগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে- যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা। গ. পূর্ববর্তি তিন হযরত (হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ, হযরত মাওলানা ইউসূফ রহ. ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ ) এর উসূল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।
(২)মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ, এর রেখে যাওয়া শুরায়ী নেযামকে উপেক্ষা করে নিজেই নিজেকে আমীর দাবী করেছেন যা শরিয়ত বিরোধী। তাই তার কোনোরূপ সিদ্ধান্ত-ফায়সালা বা নির্দেশ ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের কোথাও বাস্তবায়ন করতে দেয়া যাবে না।
(৩)দারুল উলূম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দীনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরূপভাবে নেযামুদ্দীন থেকে আগত কোন জামাতকে দেশের কোথাও কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।
(৪) হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. , হযরত মাওলানা ইউসূফ রহ., হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর বাতানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই ময়মনসিংহসহ সারা দেশে তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তি এই তিন হযরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না।
(৫)তাবলীগ জামাত একটি খালেস দ্বীনি মেহনত। এর ব্যাপক সম্পৃক্ততা জনসাধারণের সাথে। তাই চলমান পরিস্থিতিতে মেহনতের সাথে জুড়ে থাকা সাথীদেরকে অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সাথে কাজ নিতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে উলামায়ে কেরামের পরামর্শ ও নেগরানীতে কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য আহবান জানানো যাচ্ছে।
(৬)ফেৎনার সৃষ্টি তখনই হয়, যখন দ্বীন শরীয়তের উপর ব্যক্তি বিশেষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়; হক সুষ্পষ্ট হওয়ার পরও না-হকের উপর পরিচালিত ব্যক্তিকে অনুসরণ করা হয়। তাই না-হকের সাথে ইসলামের কোন আপোষ হতে পারে না। না-হকের সাথে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কখনোই সম্ভব নয়। মাওলানা সাদ পন্থী বা এতাআত পন্থী নামে পরিচিত এই বিচ্ছিন্ন গ্রæপটি না-হক পথে পরিচালিত, যার ব্যাপারে ময়মনসিংহের সকল উলামায়ে কেরাম তথা বাংলাদেশের মূলধারার সকল আলেম উলামা একমত। শোনা যাচ্ছে এই বিচ্ছিন্ন গ্রæপটি ময়মনসিংহ তাবলিগ মারকাজে অনুপ্রবেশ করে শান্তিপূর্ণ মারকাজের পরিবেশকে স্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল ও উগ্রতার পরিবেশ তৈরীর অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যা কোনোক্রমেই বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেওয়া মুনাসিব হবে না।
এ ব্যাপারে সকলকে সজাগ, সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আহবান জানোনো যাচ্ছে।
উপরোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথ বাস্তবায়ন, বর্তমান দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে সৃষ্ট বিশৃক্সখলা রোধ এবং উম্মাহর ঐক্যের কথা বিবেচনা করে-অরাজনৈতিক দ্বীনি দাওয়াতের ঐতিহ্যবাহী এই ধারাকে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার ¯^ার্থে দ্বীনের ধারক বাহক উলামায়ে কেরাম সমর্থিত তাবলিগী দ্বীনি কার্যক্রমকে সহায়তা প্রদান ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মাওলানা সাদ বা এতাআতপন্থী গ্রæপের নানা অপতৎপরতা ও কার্যক্রম বন্ধ করে সমাজে স্থিতিশীলতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সামাজিক ও প্রশাসনিক সার্বিক সহযোগিতা আজকের এই মহাসমাবেশ বিষেশভাবে প্রত্যাশা করছেন ময়মনসিংহের সর্বস্তরের ওলামা ও ইমামগণ। ##