প্রথম ট্রফি জয়ে মুখিয়ে থাকা আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ আগামীকাল ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ দিয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় বাংলাদেশের। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কোন টুর্নামেন্টে অংশ নেয় টাইগাররা।
এরপর আটটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে তিনবার ফাইনালে খেলেও শিরোপার স্বাদ নিয়ে পারেনি বাংলাদেশ। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে কোন টুর্নামেন্টে চতুর্থবারের মত ফাইনালে উঠলো সাকিবের দল। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানকে নিয়ে হওয়া চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ। তাদের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। তাই এবার শিরোপা জয়ের বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি শিরোপা জিততে চায় টাইগাররা। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে।
এই নিয়ে অষ্টমবার কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলো বাংলাদেশ। এর মধ্যে তিনবারই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ইংল্যান্ডে দ্বাদশ বিশ্বকাপের আগে গেল মে’তে প্রথমবারের মত ওয়ানডে টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ। আয়াল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ঐ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারায় মাশরাফির দল। ওয়ানডের শিরোপা জয়ের স্বাদ নেয়া শেষে ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ট্রফি ঘরে নেয়া সুযোগ বাংলাদেশের।
২০১৬ সালে এশিয়া কাপে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টির কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিলো বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে হওয়া কোন টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি টাইগাররা। ভারতের কাছে ফাইনালে ৮ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ঐ আসরে পাকিস্তান-শ্রীলংকার মত বড়-বড় দলকে হারায় টাইগাররা।
২০১৮ সালে শ্রীলংকায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেবারও ভারতের কাছে হার মানে তারা। ৪ উইকেটে ম্যাচ হেরে যায় টাইগাররা।
তবে তৃতীয়বারের মত ফাইনালে খেলতে নামা বাংলাদেশের সামনে এবার আর ভারত নয়, সাকিববাহিনীর প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়ে আছে বাংলাদেশ। কারন লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আফগানদের ৪ উইকেটে হারায় সাকিব-মুশফিকরা। ফলে আফগানিস্তানের কাছে টানা চার ম্যাচ হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসে বাংলাদেশ। সেই সাথে লিগ পর্বের সেরা দল হয়ে ফাইনালে উঠে টাইগাররা। লিগ পর্বের চার ম্যাচের তিনটিতে জয় পায় বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। এরমধ্যে চারবার আফগানরা, দু’বার জয় পায় বাংলাদেশ। তবে জয় দিয়ে লিগ পর্ব শেষ করায় ফাইনালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফেভারিটের তকমাটা পেয়েছে বাংলাদেশই। লিগ পর্বে ৪ ম্যাচে দুই জয় ছিলো আফগানিস্তানের।
ফাইনালের আগে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে আফগানিস্তান। কারন লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। ফলে ফাইনালে রশিদের খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ১০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকলেও, ফাইনাল খেলবেন বলে জানিয়েছেন রশিদ। তবে রশিদ যদি না খেলতে পারলে, মানসিকভাবে আরও সাহস পাবে বাংলাদেশ। কারন বল হাতে যেকোন সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন রশিদ।
লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের অষ্টম ওভারে ফিল্ডিং-এর সময় ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন রশিদ। মাঠে ফিরে ১৪তম ওভারে প্রথম বোলিং আক্রমনে এসেই উইকেট তুলে নেন তিনি। পরের ওভারেও নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন রশিদ। এতে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখে আফগানিস্তান। কিন্তু ঐ ইনিংসের ১৮ ও নিজের তৃতীয় ওভারে বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি রশিদ। বিশ্বসেরা এই স্পিনারের ঐ ওভার থেকে ১৮ রান তুলে ম্যাচের লাগাম নিয়ে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব ও মোসাদ্দেক হোসেন। তাই রশিদের বিপক্ষে সেরাটা দিতে পারাও বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসের বড় রসদ। তবে বিশ্বসেরা স্পিনারকে দলের ব্যাটসম্যানরা ভয় পায় না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মোসাদ্দেক। আরেক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বলেন, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পারফরমেন্স দিতে পারলেই আফগানিস্তানকে হারানো সম্ভব।
লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারালেও, ফাইনাল নিয়ে সর্তক বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। বাংলাদেশ এখনো নিজেদের সেরাটা খেলতে পারেনি এবং ফাইনালে দল সেরাটা খেলবে বলে আশাবাদি তিনি। ডোমিঙ্গো বলেন, ‘টুর্নামেন্টে এখনো আমরা সেরা ক্রিকেট খেলতে পারেনি। আমরা কিছু জায়গায় ভালো করেছি, কিছু জায়গা কম পেরেছি। তাই সেরাটা দেয়ার জন্য সবাই চেষ্টা করছে। শেষ ৫-৬ ওভারে আমাদের ১ বা ২ উইকেট পড়েনি। প্রথম ১০ ওভারেই আমরা অনেক উইকেট হারিয়েছি। তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য প্রথম ১৫ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট বেশি না হারানো। এতে শেষ ৫ ওভারে বড় স্কোর করতে সহায়তা করবে। তাই এক্ষেত্রে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’