স্ত্রীকে গণধর্ষণের পর এবার স্বামীর হাত-পা ভেঙে দিল আ’লীগ নেতা

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গৃহবধূকে গণধর্ষণ মামলার বাদী ও ধর্ষিতার স্বামীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল মৃধার নেতৃত্বে মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ধূলাসার ইউনিয়নের চাপলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূর স্বামী পশ্চিম লতাচাপলি এলাকার বাসিন্দা মো. সিদ্দিক হাওলাদার গণধর্ষণ মামলার বাদী ছিলেন। জ্ঞানহীন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাদীর বাম হাত ও দুই পা পিটিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে।

মহিপুর থানার ওসি মো. সোহেল আহম্মদ জানান, রাত ৯টার দিকে চাপলী বাজারে যান সিদ্দিক হাওলাদার। এ সময় মো. শাকিল গং’রা তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে এবং তুলে নির্জন জায়গায় তুলে নিয়ে যায়। পরে সিদ্দিকের বাম হাত ও দুই পা ভেঙে দেওয়ার খবর পেয়ে গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিক তাকে বরিশাল শেবাচিমে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে।

ওসি আরও জানান, শাকিলসহ আসামিরা কয়েকদিন আগে জেলহাজত থেকে বের হয়ে এলাকায় এসেছে বলে শুনেছি।

সিদ্দিকের স্বজন ও এলাকাবাসীরা জানান, গণধর্ষণ মামলার আসামি মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিলসহ তিনজন জেলহাজতে ছিলো। গত ৩/৪ দিন আগে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে এলাকায় আসে। রাতে চাপলী বাজারে যান মামলার বাদী সিদ্দিক। এ সময় গণধর্ষণ মামলার আসামি শাকিলের নেতৃত্বে শাহ আলম, আল-আমিন, রবিউলসহ ৮/১০ জন মিলে সিদ্দিককে পেটাতে থাকে। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় আশ-পাশের লোকজন এর প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই বাজার থেকে তাকে তুলে নির্জনে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত তার উপর চলে নির্মম নির্যাতন। এতে তার হাত-পা ভেঙে যায়। পরে শাকিল গং’রা পশ্চিম চাপলি সিদ্দিকের বাড়ি সংলগ্ন নির্জন স্থানে তাকে জ্ঞানহীন অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে তার ভাইসহ এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিল রাতে ধূলাসার ইউনিয়নের পশ্চিম চাপলী গ্রামে মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাকিল মৃধার নেতৃত্বে শাহ আলম, শাহিন, রবিউল, আল-আমিন, আ. রশিদসহ অজ্ঞাত ৭/৮ যুবক স্বামী সিদ্দিক হাওলাদারকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

সিদ্দিক তার স্ত্রীকে নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে কলাপাড়ায় যান। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী খালা হাসিনা বেগম ও খালু মতিয়ার রহমানের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। রাতে শাকিল গং’রা ওই বাড়িতে দুই দিকের দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমে সিদ্দিকের কাছে জানতে চায় তার বিয়ে করা স্ত্রী এর কি প্রমাণ আছে? এরপর সিদ্দিককে বেধড়ক মারধর করে হাত-পা বেঁধে বাড়ি সংলগ্ন বিলে নিয়ে যায়। আর স্ত্রীকে প্রথমে ওই ঘরে আটকে এবং পরে একটি মাছের ঘেরের ঝুঁপড়ি ঘরে নিয়ে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ঘটনায় মহিপুর থানায় মামলা না নিলে স্বামী সিদ্দিক বাদী হয়ে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গণধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মহিপুর থানার ওসিকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top