কুড়িয়ে পাওয়া ২ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো কিশোরী

কুড়িয়ে পাওয়া দুই লাখ টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সততার নজির গড়লো খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার হোগলবুনিয়া হাটবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মম মল্লিক (১৪) নামের এক ছাত্রী।

গত সোমবার সকালের ঘটনা। প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন মম। পথে রাস্তার পাশে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। ব্যাগটি খুলে এর ভেতরে টাকা দেখতে পেয়ে সাথে সাথেই থানায় নিয়ে যান। থানায় গিয়ে দেখেন টাকার মালিক সেখানে উপস্থিত।

মম মল্লিক বলেন, ‘থানায় গিয়ে দেখি ব্যাগের মালিকরা সেখানেই রয়েছে। পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করল, ব্যাগটি কোথায় পেয়েছি। আমি বললাম। পরে পুলিশ মালিকদের কাছে টাকাগুলো যে তার প্রমাণ করতে বললেন, তখন তারা ব্যাগে থাকা টাকার পরিমাণ ও কিছু কাগজপত্রের কথা বলল। তারপর পুলিশ মিলিয়ে দেখে ঠিক আছে। পরে সেই ব্যক্তিদের ব্যাগসহ টাকা ফিরিয়ে দেয়া হয়।’

মম মল্লিকের পিতা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শঙ্কর মল্লিক বলেন, ‘আমার তিন মেয়ের মধ্যে মম ছোট। গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে এক ভ্যানে করে প্রাইভেট পড়তে হেতালবুনিয়ার নাহারিতলায় যাচ্ছিল। পথে থানা সংলগ্ন ঝোপের কাছে একটি ব্যাগ দেখতে পায়। ব্যাগটিতে টাকা দেখতে পেয়ে ওই ভ্যান চালককে সঙ্গে নিয়েই মম থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ব্যাগটি জমা দেয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘টাকার মালিক প্রকাশ নামের একজন নিজেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দিয়ে বলেন, তারা তাদের জমি রেজিস্ট্রেশন করতে দুইটি ব্যাগে টাকা নিয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলায় যাচ্ছিলেন। অসতর্কতাবশত পথে একটি ব্যাগ পড়ে যায়। যার মধ্যে দুই লাখ টাকা ছিল। তার দেয়া টাকার বিবরণের সঙ্গে ব্যাগে থাকা টাকা মিলে যাওয়ায় পুলিশ তাদেরকে ব্যাগটি ফিরিয়ে দেয়।’

মেয়ে থানা থেকে বাসায় এসে তার বাবাকে ঘটনাটি জানায় বলে জানান অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শঙ্কর মল্লিক। মেয়ের এমন সততায় বাবা হিসেবে গর্ববোধ করছেন তিনি।

এ দিকে স্কুলছাত্রীর এমন সততায় মুগ্ধ হয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।

হোগলবুনিয়া হাটবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুজিৎ কুমার রায় বলেন, ‘আমরা শ্রেণিকক্ষে সব সময় শিক্ষার্থীদেরকে সৎ পথে থাকা, সত্য কথা বলা ও ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দিয়ে থাকি। তাদের কথাগুলো মানুষ নিজেদের ব্যক্তি জীবনেও ধারণ করে এ ঘটনা তাই প্রমাণ করে।’

একজন গুণী মানুষ হয়ে মম যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে সে প্রার্থনা করে বিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা গর্বিত। প্রতিটা ছেলে-মেয়ে যেন এমন কাজ করে, এটাই আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি।’

এ ঘটনায় আগামী ১০ অক্টোবর বটিয়াঘাটা অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকার উদ্যোগে এলাকায় আয়োজিত কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মমকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।

Share this post

scroll to top