চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ অভিযোগে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পদ হারিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
অবশ্য এর আগে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এরপরই ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হয়রানি ও মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ উঠে আসতে থাকে। বেশ কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন অভিযোগে বিদ্ধ হয়ে সমালোচনার মধ্যে থাকা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে এবার চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল।
শুক্রবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন জবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাসেল। জবিতে সংঘর্ষের জের ধরে ছাত্রলীগের কমিটি বিলোপ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর ওই কমিটি টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে রাসেলের কাছে অর্থ দাবি করেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সম্পাদক রাব্বানী। তবে রাব্বানী এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘অদৃশ্য সিন্ডিকেট’র পরামর্শে তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন এই অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সম্পাদক শেখ রাসেলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর একইদিন জবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
শেখ রাসেল বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় জবি শাখার কমিটি স্থগিত করার পর সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও তিনি কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে রাব্বানীকে অনুরোধ করেছিলেন। জবাবে রাব্বানী বলছিলেন-‘এর আগে সোহাগ ভাই-নাজমুল ভাই ছিল, তাদের বিভিন্নভাবে সুবিধা দিত শরীফ-সিরাজ (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সম্পাদক)। তোরা তো আমাকে কিছু দিস না। তোরা মাসে কত দিতে পারবি বল, তাহলে দেখি কমিটি ঠিক করা যায় কিভাবে।’
ওই শর্তে রাজি হননি বলে দাবি করেন রাসেল। পাশাপাশি কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্প নিয়েও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটির নেতারা নাখোশ ছিলেন বলে দাবি করছেন রাসেল। তিনি বলেন,‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প আছে, তারা যখন দেখছে আমরা তাদের মতো চলছি না; তখন তারা বুঝেছে যে, আমরা থাকলে (বিদ্যমান কমিটি থাকলে) প্রকল্প থেকে ওরা কিছু পাবে না।’
এই দুই কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় দাবি করে রাসেল বলেন, এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে বিভিন্ন প্রমাণ জমা দিয়েছি আমরা। গত ২২ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার পর দেড় মাসেও কমিটি ঘোষণা না করার সমালোচনা করেন রাসেল।
রাসেলের অভিযোগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সেখানে সংঘর্ষ হয়। এছাড়া জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নানা অপকর্মে লিপ্ত হওয়ায় আমরা কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করি। এখানে কমিটি টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে জগন্নাথের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার প্রশ্নই উঠে না। অনেক তদবির করে কমিটি টিকিয়ে না রাখতে পেরে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।