রওশনকে বহিষ্কারের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল

বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশনকে কোনভাবেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মানবেন না দলটির দুর্গখ্যাত রংপুর এবং রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীরা। এজন্য তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় মহিলা পার্টির নেতৃত্বে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ঝাড়ু ও জুতা মিছিল হয়েছে রংপুর মহানগরীতে। এসময় ‘রওশনের দুই গালে ঝাড়ু মারো তালে তালে’ স্লোগান দেয়া হয়। এদিকে চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়ে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি ঘোষণা দিয়েছেন জীবন দিয়ে হলেও এরশাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন তারা।

শুক্রবার বিকেল চারটায় নগরীর পায়রাচত্বর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে জেলা ও মহানগর জাতীয় মহিলা পার্টি ঝাড়ু ও জুতা মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন জেলা সভানেত্রী নাঈম জেসমিন, সেক্রেটারী জোসনা বেগম এবং মহানগর সভানেত্রী জেসমিন বেগম ও সাধারণ সম্পাদক জেসমিন আখতার। বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। মিছিলে রওশন এরশাদ এবং ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। বিক্ষোভে ‘রওশনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘রওশনের দুই গালে, ঝাড়ু মারো তালে তালে’, ‘রংপুরের মাটি জিএম কাদেরের ঘাটি’, ‘রওশনকে বহিষ্কার করো, করতে হবে’, প্রভৃতি স্লোগান দেয়া হয়। মিছিলে কয়েক হাজার নারী অংশ নেয়।

এদিকে দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বলেন, রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের সাথে থাকবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে যথাযথভাবে পালন করবো এবং মান্য করবো। এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোন মূল্যে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান রাখবো ইনশাল্লাহ। আমাদের এই ঘোষণা বাস্তবায়নের স্বার্থে আমরা যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।

দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নয়া দিগন্ত অনলাইনকে বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জীবদ্দশায় চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করে গেছেন। সেটি বিভিন্ন প্রেস ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। সারা বাংলাদেশের সকল মানুষ সেটা জানেন, মানেন।

তিনি আরো বলেন, এরশাদের কর্মী হিসেবে আমরা তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। আমরা চেয়ারম্যান হিসেবে রওশনকে মানি না। তিনি যেই হোন না কেন। তিনি যদি এরশাদের বউ হন, ভাই হন, সন্তান হোন, যে কেউ হন না কেন। আমার চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জিএম কাদেরের বাইরের কাউকে মানবো না। জাতীয় পার্টির রংপুর বিভাগের সকল নেতাকর্মী এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ।

তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রওশন কিংবা রশনপন্থীরা যদি আমাদের এই অবস্থানের ব্যাপারে কোন ধরণের ব্যতয় ঘটানোর চেষ্টা করেন তাহলে জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও আমরা তাদের প্রতিহত করবো। সারা বাংলাদেশে জিএম কাদেরের নির্দেশে জাতীয় পার্টি চলবে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই রংপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মোহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই আসনটি শুন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ১ সেপ্টেম্বর আসনটিতে নির্বাচনের জন্য তফশিল ঘোষণা করা হয়। তফশিল অনুযায়ী আগামী ৫ অক্টোবর এখানে ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। এজন্য মনোনয়ন পত্র জমা দেয়া যাবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বাছাই হবে ১১ সেপ্টেম্বর। প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর। রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ১-৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি এলাকা নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ জন। এই আসনে ভোটকেন্দ্র ১৩০টি, ভোটকক্ষ ৯১০টি।

Share this post

scroll to top