পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্ন মোটামুটি ফাঁস ছিল। হ্যাঁ, আফগানিস্তান-বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি মূলত দুদলের স্পিন আক্রমণের লড়াই হিসেবে ঘোষিত ছিল। যার ফলে বোলিংয়ে বাংলাদেশ কোনো পেস বোলিং রাখেনি। কিন্তু এই লড়াইয়ে বাংলাদেশি স্পিনাররা যতটা সফল আফগান তার থেকে কিছুটা এগিয়ে। ব্যাটিংয়েও আফগান টাইগারদের থেকে ভালো করেছে। সেই হিসেবে প্রশ্নফাঁস হওয়া ম্যাচে ‘কোনরকম’ ফলাফল বাংলাদেশের।
আগে থেকেই জানা ছিল, বোলিং কোচ ল্যাঙ্গেভেল্টও বলেছেন আফগান স্পিনার শক্তিশালী। কিন্তু প্রশ্ন আগে জেনেও প্রস্তুতি কেমন ছিল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের, সেটি প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং চিত্রেই ফুটে উঠেছে।
দ্বিতীয় দিন শেষে পলোআন এড়ালেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারের কল্যাণে দিন শেষে ৬৭ ওভারে ৮ উইকেটে হারিয়ে ১৯৪ রান সংগ্রহ করেছে সাকিব আল হাসানের দল। ৪৪ রান নিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও ১৪ রান নিয়ে তাইজুল ইসলাম রয়েছেন ক্রিজে। আফগানিস্তান থেকে এখনো পিছিয়ে ১৪৮ রান।
প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তানের করা ৩৪২ রানের জবাব দিতে নেমে পঞ্চাশের ঘরেই তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারানো স্বাগতিকরা তৃতীয় উইকেট হারায় দলীয় ৫৪ রানে।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই তামিম ইকবালের জায়গায় খেলতে নামা শাদমান ইসলামের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কোনো রান না করেই ফিরে যান সাদমান। ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে মুমিনুল হকের পরিবর্তে তিন নম্বরে ক্রিজে আসেন লিটন দাস। ১ উইকেটে ১ রান নিয়ে মধাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশনে লিটন দাস ও সৌম্য সরকার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও দলীয় ৩৮ রানে সৌম্য সরকারও ফিরে যান। ব্যক্তিগত ১৭ রানে মোহাম্মদ নবীর বলে এলবিডব্লিউ হন সৌম্য। কিছুক্ষণ পর রশিদে খানের বলে লিটন দাস(৩৩) বোল্ড হয়ে গেলে সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। দলীয় রান তখন ৫৪।
এ অবস্থায় ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন মুমিনুল হকের সাথে। দুজনে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা কররেও দলীয় ৮৮ রানের মাথায় সাকিব ১১ রান করেন আউট হলে দল আরো বিপাকে পড়ে।
সাকিবের পর ক্রিজে এসে দুই বল মোকাবেলায় শূন্য রানে আউট হলে অনেকটাই পলোআন শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।
আগে ৫৪ রানে তিন উইকেট চলে যাওয়ায় মিডল অর্ডারের দায়িত্ব ছিল ইনিংস মেরামত করার, কিন্তু রশিদ খানের এক ওভারে দলের সেরা দুই তারকাকে হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় দল।
টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়ার পর মুমিনুল হক ও সাকিব আল হাসান ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে মুমিনুল, মুশফিক ও সাকিবের দিকে তাকিয়ে ছিল সমর্থকরা। সাকিব-মুমিনুল জুটি সেই পথেই চলছিল; কিন্তু ৩৩তম ওভারে রশিদ খানের বলে সাকিব ব্যক্তিগত ১১ রানের মাথায় এলবিডব্লিউ হয়ে যান। নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম এসে দ্বিতীয় বলেই আউট! ব্যাটের কোনায় লেগে নাগের ডগায় দাড়ানো ফিল্ডারের হাতে যায়। যদিও আউটটি নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তৃতীয় আম্পায়ারও অনেকভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন।
এর ফলে বাংলাদেশর রান দাড়ায় ৫ উইকেটে ৮৮ রান। ১০৪ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৭ রান করে ফেরেন মাহুমুদুল্লাহ রিয়াদ। দেখে শুনে খেলে মুমিনুল তুলে নেন ফিফটি। হাফ সেঞ্চুরি করে বেশিদূর যাওয়া হয়নি তারও। ৫২ রান করে মোহাম্মদ নবীর শিকার হন তিনি। মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। ১৪৬ রানে ৮ উইকেট হারালে সেখান থেকে দলকে মোসাদ্দেক ও তাইজুল দলকে এগিয়ে নেয়ার কাজ করেন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ৫২ রান। তৃতীয় দিন দলকে কতটুকু ব্যাটসম্যানদের কাজ এগিয়ে নেন সেটাই দেখার বিষয়।
দিন শেষে আফগান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক রশিদ খান। ১৮ ওভার বল করে ৪৭ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট। এছাড়াও মোহাম্মদ নবী ২, কায়েস আহমেদ ও ইয়ামিন আহমেদজাই একটি করে উইকেট শিকার করেন।প্রশ্নফাঁস হওয়া ম্যাচে ‘কোনরকম’ বাংলাদেশ