জাতীয় ফুটবল দলে বড় ‘চমক’ ইয়াসিন আরাফাত

এবারের বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে বড় চমক ইয়াসিন আরাফাত। একেবারে অপরিচিত এই লেফট ব্যাক কাতার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে জেমি ডে বাহিনীর স্কোয়াডে। অবশ্য তিনি যে জাতীয় দলে ডাক পাবেন এই আত্মবিশ্বাস তার মনে ঢুকিয়ে দেন সাইফ স্পোটিংয়ের কোচ স্টুয়ার্ট হল। লিগে তার পরফরম্যান্সই বৃটিশ কোচকে ওই মন্তব্য করতে বাধ্য করে। ক্লাব কোচের এই প্রত্যাশার ব্যতিক্রম করেননি বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ জেমি ডে। তার পাশ মার্কও নারায়নগঞ্জের এই উঠতি ফুটবলারের। এখন আফগানিস্তান বিপক্ষে খেলতে যাওয়া তাজিকিস্তান সফরে ২৩ জনের দলে উনিশ বছর বয়সী  এই সদস্যটির।

অনেকের কাছে নতুন মুখ হলেও লাল সবুজ জার্সি গায়ে দেয়াটা এই প্রথম নয় ইয়াসিন আরাফাতের। তিনি ছোট বয়স থেকেই বাংলাদেশ দলের সদস্য। তা বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের হয়ে। ইয়াসিন আরাফাত জানান, আমি অনূর্ধ্ব-১২, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলে খেলেছি। এবার ডাক পেলাম সিনিয়র জাতীয় দলে।’ অল্প বয়সে অনেক ফুটবলারই বাংলাদেশ দলে ডাক পান। আবার ঝরেও যান দ্রুত। কিন্তু সেই কাতারে থাকতে নারাজ আরাফাত।

তার মতে, আমি দশ বছর জাতীয় দলে খেলতে চাই। নিজেকে আরো পোক্ত করতে চাই। দিতে চাই দেশকে আরো কিছু।

এবারই প্রথম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা আরাফাতের। এর আগে সর্বশেষ তৃতীয় বিভাগ লিগে গায়ে তোলেন কদমতলা সংসদের জার্সী। ২০১৫ সালে পাইওনিয়ার লিগে আরামবাগ ফুটবল অ্যাকাডেমীর হয়ে ঢাকার ফুটবলে অভিষেক তার।

শুধু প্রতিপক্ষের আক্রমন ঠেকানোই কাজ নয় ইয়াসিন আরাফাতের। গোল করতেও দক্ষ তিনি। আবার গোলের উৎসও ইংরেজিতে অর্নাস পড়া ফুটবলারটি। তার দেয়া তথ্য, ‘আমি এবার প্রিমিয়ার ফুটবলে কোনো গোল করতে না পারলেও আমার পাস থেকে গোল হয়েছে ৬-৭টির মতো। এর চারটি ছিল আমার কর্নার কিক। বাকীগুলো আমার ক্রস থেকে।. বাবা মায়ের একমাত্র ছেলেটি জানান, আমি অনূর্ধ্ব-১২ জাতীয় দলে মালয়েশিয়ার সুপার মক কাপে তিনটি, অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে শ্রীলংকা এবং ভুটানের বিপক্ষে একটি করে গোল করেছি।  এছাড়া ঢাকা লিগে পাইওনিয়ার লিগে তিনটি, তৃতীয় বিভাগ লিগে দুটি গোল করেছি।’ কর্নার ছাড়াও পেনাল্টি  এবং ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট তিনি।

শিরোপার স্বাদ নেয়া আছে ইয়াসিন আরাফাতের। মালয়েশিয়ায় সুপার মক কাপে দুই বার প্লেট পর্বে চ্যাম্পিয়ন অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৬ দলের সদস্য তিনি। তাদের কল্যানেই পাইওনিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয় আরামবাগ ফুটবল অ্যাকাডেমী। কদমতলা সংসদ রানার্সআপ হয় তৃতীয় বিভাগে। এবার এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলে তিনি লাল-সবুজ জার্সী গায়ে মাঠে নামেন শ্রীলংাকর বিপক্ষে। সে ম্যাচে জয় বাংলাদেশের।  ২০১৭ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে কাতারের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পওয়া দলেরও সদস্য তিনি। এবার বিপিএল’এ তিনি ২৪ ম্যাচের ২৩টিতেই খেলেছেন। শুধু সাইড বেঞ্চে ছিলেন মোহামেডানের বিপক্ষে। তথ্য দেন ইয়াসিন আরাফাত।

তবে এবারই তিনি জাতীয় দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডে ডাক পাবেন তা ভাবতে পারেননি। জানান, ‘ক্যাম্পে ডাক পাবো এই আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু ফাইনাল স্কোয়াডে চান্স হবে এতোটা চিন্তা করিনি। যখন কোচ আমার নাম ঘোষনা করলেন তাজিকিস্তান গামী দলে তখন খুব খুশী লেগেছে। ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না তা। প্রতিক্রিয়ায় বলেন,স্রেফ কঠোর পরিশ্রমেরই ফল এটি।’ ১০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার সুযোগ না হলেও কষ্ট থাকবে না তার। ইয়াসির আরাফাত জানালেন, যদি খেলার সুযোগ না পাই তাহলে ভবিষ্যতে আরো ভালো করা জেদ চাপবে।

নারায়রগঞ্জের কোচ আসলাম চৌধুরীর হাতে তার ফুটবল শিক্ষা। বাবা হারুনুর রশীদ প্রধানও তাকে উৎসাহ দেন। আজ সকালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর শুনেই সাথে সাথে বাবাকে ফোনে জানিয়েছি। বাবাও খুব খুশী হয়ে বলেছেন আরো ভালো করতে। নারায়ানগঞ্জ জেলারই জাতীয় দলের সাবেক লেফট ব্যাক ওয়ালী ফয়সাল তার প্রিয় ফুটবলার দেশে। বিদেশে ব্রাজিলের লেফট ব্যাক মার্সেলো।

Share this post

scroll to top