কাশ্মিরে মানবাধিকার হরণের প্রতিবাদে নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ সমাবেশ

দখলদার ভারত কতৃক কাশ্মিরের মানুষের অধিকার হরণ ও সেখানে গণহত্যার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নিউ ইয়র্কস্থ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন- উগ্রহিন্দুত্ববাদী মানসিকতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি কাশ্মিরের মুসলমানদের নির্মূলে কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে ভারতের গণতন্ত্র সুরক্ষিত নয়, সংখ্যালঘুদের অধিকার ভূলুন্ঠিত হতে বাধ্য। দক্ষিণ এশিয়ায় সহিংসতা ছড়াতে তার এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামিক লিডারশিপ কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রাজা আব্দুল্লাহ, লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. শওকত আলী, সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পারিচালক ইমরান আনসারী, মাওলানা ভাষানী ফাউন্ডেশন ইউএস- এর সেক্রেটারি আলী ইমাম, বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুর রহিম হাওলাদার, বাংলাদেশি আমেরিকান এডভোকেসি গ্রুপের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া ও নির্বাহী পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির, ইউনাটেড ওলামা কাউন্সিলের সভাপতি মুফতি লুৎফুর রহমান কাসেমি, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা আতিকুর রহমান সালু, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ প্রমূখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে রাজা আবদুল্লাহ বলেন, যেখানেই মুসলমানেরা আগ্রাসনের শিকার, যেখানেই মুসলমানরা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে সেখানে তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আওয়াজ তোলা প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব। ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে ফিলিস্তিনের যে করুণ পরিণতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ঠিক অনুরূপভাবে ভারতের আগ্রাসনে কাশ্মিরের অবস্থাও সেই দিকে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ড. শওকত আলী বলেন, কাশ্মিরে আগ্রাসনের মাধ্যমে ভারতের হিন্দু উগ্রবাদী সরকার ভারতের জাতীয় নেতাদের অপমান করেছে। কাশ্মিরে আগ্রাসনের পর বাংলাদেশ ও নেপালের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। সুতরাং কাশ্মির ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারকে ভূমিকা পালন না করে বসে থাকলে চলবে না।

ইমরান আনসারী বলেন, কাশ্মির ইস্যুটি ভারতের আভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। সুতরাং দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি রাখাইন রাজ্য দেখার আগেই অবিলম্বে কাশ্মিরে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োগ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির কিংবা চীন নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের মানচিত্র দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই একটি অখন্ড স্বাধীন সার্বভৌম কাশ্মির।

ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উগ্রবাদী সংগঠন আরএসএস’র একজন সক্রিয় সদস্য। তার প্রধান কাজই হল মুসলিম নিধন। তার এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেককে কথা বলতে হবে।

আলী ইমাম বলেন, কাশ্মিরে আজ মানবতার বিপর্যয় চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে। তাদের জীবন সম্পদের নিরাপত্তায় আজ বিশ্ব বিবেককে আওয়াজ তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বে মুসলিম নিধনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। আজকে মুসলমানদের রক্ষায় আওয়াজ তুলতে হবে।

মুফতি ফজলুর রহমান কাসেমি বলেন, কাশ্মিরের ৭০ লাখ জনগণ মানবিক জীবনযাপন করছে। তাদেরকে রক্ষায় আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে।

আবদুর রহিম হাওলাদার বলেন, ভারতের প্রধানন্ত্রীকে ভাবতে হবে কতজন মুসলমান ভারতের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে। কোনো ভাবেই ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের হত্যা মেনে নেয়া হবে না।

অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্কের পরিচিত বাঁচিক শিল্পী রুমাইসা আনসারী অবিলম্বে কাশ্মিরের শিশুদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী নিশ্চিত ও স্কুলগুলো খুলে দেয়ার দাবি জানান।

প্রতিবাদ বিক্ষোভটির সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে- মজলিসে শুরা নিউ ইয়র্ক, সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ইনিশিয়েটিভ, ওয়ার্ল্ড রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশি আমেরিকান এডভোকেসি গ্রুপ, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী নাগরিক সমাজ, সেইফিস্ট।

এদিকে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের নজর কাড়তে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের সামনে স্ট্যান্ড উইথ কাশ্মির ব্যানারে নিউ ইয়র্কের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন শুক্রবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

Share this post

scroll to top