অবিলম্বে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেইসাথে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার অক্ষম মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেঝেতে কাতরাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু-বাচ্চারা। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোন সক্ষমতা নেই এই সরকারের। উন্নয়নের নামে পকেট ভারী করার জন্যই আজকে ডেঙ্গুর মতো এই দুর্যোগ মোকাবেলায় অক্ষম সরকার। মশা নিধনে যদি সত্যিকারের কার্যকরী ঔষুধ নিয়ে আনা হতো তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেতো না। মানুষ বাঁচাতে সরকারের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। তারা যেটি করছে সেটি হলো লোক দেখানো মশা নিধনের নামে ক্যামেরা শ্যুটিং। রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে পবিত্র ঈদুল আযহার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদুল আযহার পূর্বেই মুক্তি দিতে হবে।
শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, আবেদ রাজা প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরও কোনো অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় এটি ২৩ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়াতে শরীরের ওজন অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে আমরা বারবার দাবি করা সত্বেও দেশনেত্রীকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বিশিষ্ট দেশের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। ব্যথার কারণে রাতে তার ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। দেশনেত্রীর সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করছে দেশবাসী সবাই।
কিন্তু সরকারের নির্মম আচরণে নিরাশ হয়ে পড়েছে তারা। কারাগারে নেয়ার সময় সুস্থ বেগম জিয়াকে এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে এখনো অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর মাষ্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত। এই মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে-গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দেয়া। এই মধ্যরাতের সরকার নতুন কাশিমবাজার কুঠি সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে পরাধীন করতে এক সর্বনাশা পথে হাঁটছে বলেই গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রোগে-শোকে-ব্যথা-বেদনায় জর্জরিত রেখে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। তার জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে।
আদালতের কথাতেই মনে হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কিছু হবে না। আপনারা দেখেছেন-বেগম জিয়ার আইনজীবীরা যখন আদালতে শুনানী করেন তখন তারা বলেছেন-সরকারের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা বলেছেন খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দেয়া হবে না। আদালত প্রতিউত্তরে বলেছেন- ‘শেখ হাসিনার কথা আর ওবায়দুল কাদেরের কথা এক নয়, ওবায়দুল কাদেরের কথা রাস্তার কথা।’ এতে প্রমাণিত যে, শেখ হাসিনাই কারাগারে বেগম জিয়াকে আটকিয়ে রেখেছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার জামিনও মিলবে না। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল যে, ঈদুল আযহার আগেই দেশনেত্রী কারামুক্ত হবেন। কিন্তু মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
‘দেশ উন্নত হচ্ছে বলেই ডেঙ্গু হচ্ছে, যে দেশ যতবেশী উন্নত হচ্ছে সেদেশে ততবেশী রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু এলিট শ্রেণীর মশা।’ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এগুলোকে ‘টক অব দি সেঞ্চুরি’ বলবো নাকি ‘শক অব দি সেঞ্চুরি’ বলবো, এ নিয়ে দ্বিধায় আছি। মধ্যরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী মন্ত্রীসভায় এডিস মশা বিস্তারের মতো গবুচন্দ্রের মন্ত্রীদেরও বিস্তার ঘটেছে। দেশব্যাপী যেমন এডিস মশার বিস্তারে কোনো বিরতি দেখা যাচ্ছে না, ঠিক তেমনি নবকলবরে গবুচন্দ্র মন্ত্রীদেরও হাসি-তামাশা উদ্রেককারী কথাবার্তারও কমতি দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী কোন ব্যুরো থেকে উল্লিখিত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করেছেন তা জানালে দেশবাসীর উপকার হতো। দেশ উন্নত হলে যদি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তাহলে লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিস, কোপেনহেগেন ইত্যাদি উন্নত দেশের শহরগুলোতে ডেঙ্গুতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাতো। এহেন মন্ত্রীদের উদ্ভট বোলচালে জনজীবন ডেঙ্গুর মতোই বিপর্যস্ত। তবে মন্ত্রী বোধহয় আসল কথাটি বলতে চেয়েছেন একটু অন্যভাবে যে, উন্নয়নের নামে দুর্নীতির বিপুল পরিমান টাকা পকেটস্থ হলেই ডেঙ্গুর মতো প্রাণবিনাশী বালা মুসিবত দেশে বিস্তার লাভ করে।
তিনি বলেন, মশা নিধনের টাকা লুটেপুটে খেয়েছে মেয়ররা। সুতরাং আর্থিক উন্নতি হয়েছে মন্ত্রী-মেয়রদের, দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ডেঙ্গু নিয়ে স্ববিরোধী, বিপরীতধর্মী কথাবার্তা, রাতের কথার সাথে সকালের কথার গরমিল, ইত্যাদি এধরণের কথা থেকে সিকি-আধুলি ও গোটা মন্ত্রী কেউই কম যাচ্ছেন না। ওবায়দুল কাদের সাহেব কদিন আগে বলেছেন যে, সবাই ঈদে বাড়ি যাবেন কোনো অসুবিধা নাই। গতকাল আবার বলেছেন-বাড়ী যাবার আগে রক্ত পরীক্ষা করে যাবেন।
বিবিসির সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- এডিস নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মূলত: মেয়র থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের দু:খ-দুর্দশাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে ঠাট্টা মশকরা করছেন। অথচ সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে কোন ঠাঁই নেই। ডেঙ্গু রোগীতে ছেয়ে গেছে সব হাসপাতাল। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও রক্ত পরীক্ষা করতে পারছে না রোগীরা। কেউ কেউ অনেক কষ্ট করে রক্ত পরীক্ষা করেও রিপোর্ট পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছে। যেদিন রিপোর্ট দেয়ার কথা বলা হয়, সেদিন রোগীরা রিপোর্ট পান না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট নিয়ে প্রচন্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পরিবারগুলোকে। আবার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ।