কাশ্মীরি জনগণের অধিকারের পক্ষে বিশ্ব নেতৃবৃন্দসহ সকল মানুষকে সোচ্চার হওয়ার ও অবিলম্বে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভারতের শাসকগুষ্ঠি কাশ্মীরে যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের উপর সীমাহীন জুলুম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। লাখ লাখ নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য মুসলমানকে গুম করা হয়েছে। মুসলিম মা-বোনদের নির্বিচারে ধর্ষণ করা হয়েছে। একাধিকবার গণহত্যা চালানো হয়েছে কাশ্মীরি মুসলমানদের উপর। নিরাপরাধ মুসলমানদের রক্তে ভূ-স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর সিক্ত হয়েছে বারবার। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অধীকন্তু সম্প্রতি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া হয়েছে। এতে করে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ঐ অঞ্চলের মুসলমানদের নিরাপত্তা বিপন্ন ও নাগরিক অধিকার স্থায়ীভাবে লুণ্ঠিত করার আয়োজন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে ছাত্রশিবির সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এর আগে কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন, সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ ও মুসলিম নেতৃবৃন্দকে গৃহবন্দি করে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। কাশ্মীরের জনগণের অধিকার হরণের পর গৃহবন্দি অবস্থা থেকে সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু ভারত সরকারের একতরফা কোনো পদক্ষেপ এ অঞ্চলের অবস্থানকে পরিবর্তন করতে পারে না। কারণ অধিকৃত কাশ্মীর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিতর্কিত অঞ্চল। এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তাছাড়া জম্মু-কাশ্মির-লাদাখের মানুষের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ পর্যন্ত করা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জনগণ ও বিশ্ববাসী মেনে নেয়নি। এমনকি ভারতেও এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিরোধীতা রয়েছে। এই বিতর্কিত বিল উত্থাপন হলে স্বয়ং ভারতীয় পার্লামেন্টেই এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। ভারতীয় পার্লামেন্ট সদস্য টি কে রঙ্গরাজন বলেছেন, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারতের সংবিধানকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং আরেকটি ফিলিস্তিন তৈরী করা হচ্ছে।
তারা বলেন, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এর মাধ্যমে ভারত ভাঙ্গনের সূচনা হয়েছে। তাছাড়া ভারতের অসংখ্য রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে। একতরফা পদক্ষেপকে অঞ্চলটিতে সঙ্ঘাত উস্কে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্বের জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলোও। কাশ্মীরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। বিশ্ববাসীও তাদের নিয়ে উৎকন্ঠায় আছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কাশ্মীর সমস্যা উদ্ভবের পর বহু নতুন নতুন সৃষ্ট সংকটের সমাধান হয়েছে। কিন্তু যুগের পর যুগ চলে যাচ্ছে, কাশ্মীরি মুসলমানরা গণহত্যা গুম ধর্ষণ নিধনের শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে পারছেন না, কিন্তু বিশ্ব নেতৃবৃন্দ রহস্যজনকভাবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে তেমন কোন উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। বিশেষ করে মুসলিম নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা আরো লজ্জাজনক। আজ বিশ্ববাসীর কাছে পরিস্কার যে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পেছনে আসল উদ্দেশ্যে হচ্ছে মুসলিম-গরিষ্ঠ কাশ্মীরের ‘ডেমোগ্রাফি’ বা জনসংখ্যাগত চরিত্র বদলে দেয়া। জম্মু-কাশ্মীরে মুসলমানদের অস্তিত্ব বিলিন করে আরেকটি ফিলিস্তিন তৈরীর মহাপরিকল্পনার অংশ ৩৭০ ধারা বিলোপ। এ অবস্থায় বিশ্ববাসী কিছুতেই চুপ থাকতে পারে না। একটি জনপদের শান্তিকামী জনগণকে যুগের পর যুগ জুলুম নির্যাতনের মুখে ফেলে রাখা কোন ভাবেই সুসভ্যতার পরিচায়ক হতে পারে না। সুতরাং অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীরের মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা ও অধিকার ফিরিয়ে দিতে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ছাত্রশিবিরের এই দুই শীর্ষনেতা বলেন, আমরা অবিলম্বে কাশ্মীরের জনগণের উপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ করে তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। একই সাথে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্ববাসীকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। আর মুসলিম বিশ্বের উচিৎ, যত দ্রুত সম্ভব নির্যাতিত নিপীড়িত কাশ্মীরের মুসলিমদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকেও প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া আমাদের ঈমানের দাবী। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহবান রেখে বলতে চাই, এ পদক্ষেপ সরাসরি আগ্রাসন ও জনগণের আস্থার প্রতি পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা। কাশ্মীরের মুসলমানদের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ ভারতের ইতিহাস ঐতিহ্যের জন্য লজ্জাজনক। মুসলমানরা শত শত বছর ভারতকে শাসন ও সমৃদ্ধ করেছে। ভারতে হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দপূর্ণ অবস্থানের অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ‘বৃটিশ খেদাও’ আন্দোলনে মুসলমানগণ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। অন্যথায় ভারত স্বাধীনতার মুখ দেখত না। মুসলমানদের বাদ দিয়ে ভারতের কোন অস্তিত্ব ইতিহাস কল্পনাও করা যায় না। কাশ্মীরের মুসলমানরা তাদের ভূমির আসল মালিক। তাদের উপর যুগের পর যুগ জুলুম নির্যাতন ভারতের ইতিহাস ঐতিহ্য আর অবস্থানকে সমৃদ্ধ করেনি বরং বিশ্ববাসীর কাছে ভারতকে নির্যাতনকারী হিসেবে পরিচিত করেছে। এটা ভারতের জনগণের জন্য ভাল বিষয় নয়। জুলুম নির্যাতন ও অধিকার হরণ চিরস্থায়ী হয়না তার বড় প্রমাণ স্বয়ং ভারতই। কাশ্মীরের জনগণ যুগের পর পর জুলুম নির্যাতন নিষ্পেষনের শিকার হয়েছে কিন্তু অধিকার ছাড়েনি এবং ছাড়বেও না। সুতরাং আপনাদের এ সিদ্ধান্ত শান্তির উপত্যকাকে আরো অস্থির করে তুলবে এবং গোটা উপমহাদেশ অস্থিতিশীল হতে পারে। যা আমাদের কারো কাম্য হওয়া উচিৎ নয়। আমরা আশাকরি ভারত সরকার ও জনগণ কাশ্মীর ইস্যুতে একটি ন্যায় ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে এগিয়ে আসবে।