ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনের ওষুধ আনায় কালক্ষেপণের সমালোচনা করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বলেছেন, আমার কাছে খুবই এটা দুঃখজনক লাগে যে, মশার ওষুধ কেনার জন্য কি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ লাগে? মশা মারার জন্য কি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগে? তা হলে প্রধানমন্ত্রী থাকলে হয়, বাকি এই ‘সঙগুলো’ দরকার কী আমাদের?
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় মুক্তিমঞ্চের উদ্যোগে দেশের সার্বিক বিরাজমান পরিস্থিতি-উত্তরণের উপায় শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মান্না এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কার্যকর ওষুধ কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হয়েছে। সরকারের একজন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, দলেরও বিশেষ দায়িত্বে আছেন নাম বলতে চাই না, ব্যক্তিগত বন্ধু আমার। উনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডন থেকে রোজ নাকি নজরদারি রাখছেন- কোথায় কোথায় ডেঙ্গুর কী কী হচ্ছে, তার কী কী করতে হতে পারে। আমি অবাক হয়ে যাই- লন্ডন থেকে কোথায় কোথায় এডিস মশা, কোথায় ডিম পাড়ে- এটি দেখা যায় নাকি?
মশা মারার নামে দায়িত্বশীলদের প্রচারমুখিতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এরা এখন পর্যন্ত মশা মারার কার্যকর ওষুধ আনতে পারেনি। কিন্তু মশা মারার নাটক ঠিকই করে বেড়াচ্ছে। সিনেমার শিল্পীদের নামিয়ে দিয়েছে রাস্তায়, সব কৌতুক অভিনেতাকে নামিয়ে দিয়েছে, বিভিন্ন লেখককে নামিয়ে দিয়েছে এবং ঝাড়ু হাতে একটা দেখার মতো দৃশ্য! ঘরে ঘরে ছবি টাঙিয়ে রাখতে পারেন- এ রকম দৃশ্য দেখানো হচ্ছে- ঝাড়ু দিচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে মান্না বলেন, বুঝতেই পারেন সবাই- সিনেমার এক-একজন চিত্রতারকা সামনে আছেন আমাদের ইনফরমেশন মিনিস্টার। উনি থাকলে সবার থাকতে হয়। অনেকটাই জোর করে, বল প্রয়োগ করে এবং ভয় দেখিয়ে যে কোনোভাবে তাদের এই নাটক করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে বিদেশ সফরে যাওয়ায় এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকেরও কড়া সমালোচনা করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এ শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু যখন মহামারী আকার ধারণ করেছে, তখন আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশে যান পরিবারিক সফরে। হেলথ মিনিস্টার ইজ অ্যা রিয়েল ‘সারপ্রাইজ গাই’। এ রকম বিস্ময়কর মানুষ বোধ হয় আমরা মন্ত্রিসভায় আগে দেখিনি। গতকালকে তিনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবেলা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, এ রকম মূর্খ, অকালকুষ্মাণ্ড, কাজ করতে পারে না শুধু কথা বলে- এ রকম যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের হাতে দেশ তো নিরাপদ নয়, আমরা কেউ নিরাপদ নই।
ডেঙ্গু সামনের সময়গুলোতে আরও ভয়াবহ রূপ নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত।
সেমিনারে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ বলেন, দেশ স্বাধীন হলেও জনগণ স্বাধীন হয়নি। ব্যাংকে টাকা নেই, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নেই, মশা মারার ওষুধ নেই। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ বাদ দিয়ে জনগণকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। এ জন্য হয় দেশের মানুষের মুক্তি হবে নয়তো মৃত্যু হবে।
জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আহ্বায়ক অলি আহমেদ বলেন, ‘নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে জনগণকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধে সময় যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, এ মঞ্চে আমি বলছি- হয় মুক্তি হবে নয়তো মৃত্যু হবে। এ প্রতিজ্ঞা করে যেতে হবে। দেশকে বাঁচান, দেশের জনগণকে বাঁচান।’
দোষারোপের রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, দুর্নীতি মাদকমুক্ত, দলীয়করণমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে হবে। একে ওপরকে দোষারোপ শেষ করে কখনও দেশকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে ডেঙ্গু, নাজুক অর্থনীতি, বন্যা, রাজনৈতিক সংকট এবং গজব ও গুজব নিয়ে আলোচনা হয়। এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুনির হোসাইন, সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।