চুরির ঘটনা ফাঁস করায় চালককে হত্যা করে বালু চাপা দেয় তারা

পিকআপ ভাড়ার পাওনা তিন শ’ টাকা না দেয়ায় সাইড কন্ট্রাক্টর ও তার সহযোগিদের চুরির খবর ঠিকাদারকে জানিয়ে দেয়ায় পিকআপ চালক মো. উজ্জল হোসেনকে (২১) গলা কেটে হত্যা করে লাশ বালু চাঁপা দিয়ে রাখা হয়। গত ২ আগস্ট নগরীর কাশিপুরস্থ নির্মানাধীন ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার কাঁশবনের ভেতরে বালুচাঁপা অবস্থায় নিহতের লাশ উদ্ধার করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।

লাশ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ অভিযানে নেমে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে উজ্জল হত্যাকান্ডে জড়িত প্রধান অভিযুক্তসহ তার দুই সহযোগিকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গ্রেফতারকৃতদের উপস্থিতিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরের পঞ্চম তলার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাব উদ্দীন খান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, নির্মানাধীন ট্রাক স্ট্যান্ডের সাব কন্ট্রাক্টর ও উজ্জল হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ফুলঝুড়ি গ্রামের জালাল হাওলাদারের পুত্র সোহাগ। তার দুই সহযোগি মিনি ট্রাকের হেলপার ও বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের কাজীরহাট এলাকার আনোয়ার হোসেনের পুত্র রমজান এবং নির্মান শ্রমিক মাদারীপুরের কালকিনি এলাকার ইদ্রিস ফকিরের পুত্র রবিউল।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তির উদ্বৃতি দিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন-গ্রেফতারকৃতরা নির্মানাধীন ট্রাক স্ট্যান্ডের কাজের সাইড থেকে বিভিন্ন সময় রড, সিমেন্ট, খোয়াসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করে উজ্জলের পিকআপ ব্যবহার করে বাহিরে নিয়ে বিক্রি করতো।  সর্বশেষ সোহাগের কাছে ট্রাক ভাড়া বাবদ উজ্জল তিনশ’ টাকা পেতো। ওই টাকা না দেয়ায় উজ্জল তাদের চুরির বিষয়টি মূল ঠিকাদার স্বপনকে জানিয়ে দেয়। এরপর মূল ঠিকাদার স্বপন সাব কন্ট্রাক্টর সোহাগকে তার পাওনা এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা আটকে দেয়। এরপর থেকেই মূলত সোহাগ পিকআপ চালক উজ্জলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উজ্জলকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুইবার কোমল পানির সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ ১ আগস্ট উজ্জল ভান্ডারিয়া থেকে ট্রিপ শেষ করে ফেরার পথে গ্রেফতারকৃত সোহাগ ও রবিউলের ফোন পেয়ে ট্রাক টার্মিনালের ভেতরের নির্মানাধীন ভবেনর ছাদে ওঠে। সেখানেই গ্রেফতার হওয়া আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সোহাকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গলাকেটে জবাই করে হত্যা করা হয়। পরে সোহাগের পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী উজ্জলের লাশ কাথা দিয়ে পেচিয়ে ভবনের পাশের কাশবনে গর্ত করে বালিচাঁপা দিয়ে রাখা হয়। পুলিশ কমিশনার শাহাব উদ্দিন খান বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি, পোশাক, বেলচা, কোদাল আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, গত ১ আগস্ট রাত থেকে পিকআপ চালক উজ্জল নিখোঁজ হন। এরপর তার স্বজনরা তাকে খুজতে থাকে। একপর্যায়ে ২ আগস্ট সন্ধায় নিহতের মা পারভীন বেগম নির্মানাধীন ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার কাঁশবনের ভেতরে উজ্জলের জুতা দেখতে পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশী চালিয়ে আলগা বালুর স্তুপ খুরে উজ্জলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওইতিন রাতেই নিহতের মা বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ তদন্তে নেমে ট্রাক স্ট্যান্ডের সাব কন্ট্রাক্টর মোঃ সোহাগকে নগরীর আলাকান্দা এলাকা থেকে গ্রেফতারের পরেই ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসতে থাকে। পাশাপাশি নগরীর ধানগবেষনা রোড এলাকা থেকে নিহত উজ্জলের ভাড়ায় চালিত পিকআপটি উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে কিলিং মিশনের সাথে জড়িত থাকা অপর দুই আসামি রবিউল ও রমজানকে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Share this post

scroll to top