ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত মানিকগঞ্জের সালমা

সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নে বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। ঘটনার পাঁচ দিন পর নিহত ওই নারীর স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তাকে শনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গণপিটুনিতে নিহত ওই নারীর নাম সালমা বেগম (৩৭)। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার মুসলিমাবাদ গ্রামের বিল্লাল হোসেনের মেয়ে এবং সাভার পৌর এলাকার ইমান্দিপুর মহল্লার মিজানুর রহমানের স্ত্রী।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এমারত হোসেন মঙ্গলবার বিকালে নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে তার পরিচয় শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নিহতের চাচা কোহিনূর ইসলাম জানান, তার ভাতিজি সালমার সঙ্গে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মিজানুরের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ১০-১২ বছর আগে মিজানুর তার ভাতিজিকে ডিভোর্স দিয়ে আবারও বিয়ে করে। তবে মিজানুর তাদের তিন মেয়ে মিতা, মনিকা ও মিশকাতকে তার কাছেই রেখে দেয়। আর সালমা ডিভোর্সের পর থেকে মানিকগঞ্জে সিঙ্গাইরের মুসলিমাবাদ এলাকায় তার বাবার বাসায় থাকত এবং মাঝে মধ্যেই মেয়েদের দেখতে সাভারে মিজানুরের বাড়িতে যেত। এছাড়াও সালমা সাভারে আসলে ব্যাংক কলোনিতে আমার বাড়িতেও আসত সালমা।

কোহিনুর ইসলাম অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় স্বামী মিজানুর ও তার স্বজনরা সালমাকে ছেলেধরা অজুহাতে গণপিটুনি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তবে সালমা মানসিকভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্ত ছিল বলেও জানান তিনি।

নিহতের মা বছিরুন খাতুন বলেন, গত শুক্রবার সকালে তার মেয়ে সালমা মেয়েদের দেখার জন্য গ্রামের বাড়ি মোসলিমাবাদ থেকে সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সেদিন রাতে সামলা সিংগাইরের ধল্লা এলাকায় বোনের বাসায় থেকে শনিবার সকালে সাভারে যায়। পরে মঙ্গলবার বিকালে আমরা জানতে পারি শনিবার সাভারের তেঁতুলঝোড়ায় এলাকায় একটি বাসা দেখতে গেলে ছেলেধরা সন্দেহে সালমাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা।

তিনি আরও বলেন, সালমার স্বামী মিজানুর দীর্ঘদিন বিদেশ থেকে কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছে। এর আগে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে মেয়েদেরকে স্বামীর বাড়িতে রেখে সালমা বাড়িতেই থাকতো। তবে মাঝে মধ্যে সে তার মেয়েদের দেখতে সাভারে গেলে মিজানুরের দ্বিতীয় স্ত্রী সালমাকে প্রচণ্ড মারধর করতো। গত এক মাস আগেও সালমা ও তার মেয়েদেরকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল।

নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এমারত হোসেন বলেন, নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাস্থল থেকে নিহতের স্বামী মিজানুরের বাড়ির দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার কথা নয়।

তবে নিহত সালমা বেগম গত ২০ জুলাই দুপুরে তেঁতুলঝোড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিতেই গিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেন পুলিশ কর্মকর্তা।

সাভার মডেল থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় ২১ জুলাই রাতে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ৭০০-৮০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

Share this post

scroll to top