নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা এবং গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জেলার আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীতে পানিবৃদ্ধি পেয়েছে।
পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর ডানতীরে চকবালু নামক স্থানে প্রায় ১০০ ফুট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জেলার আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার থেকে বেড়ে ৯০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া এ উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে ১৭ মিটার, ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলী পয়েন্টে বিপদসীমার ২১ দশমিক ৬৭ মিটার এবং মহাদেবপুর আত্রাই নদীতে ১৮ দশমিক ১৭ মিটার সমানভাবে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের চকবালু নামক স্থানে ভেঙে প্রসাদপুর-জোকাহাট যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
শত শত হেক্টর জমির ধান, শাকসবজি ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। গরু-ছাগল নিয়ে অসংখ্য মানুষ সড়ক ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছেন।
উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সোমবার রাতে শহরবাড়ি ভাঙিপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
এ ছাড়া মদনচক, উত্তর লক্ষ্মীরামপুর, বানডুবি, বাগাতিপাড়া, জোতবাজার, গোয়ালমান্দা, পারনুরুল্লাবাদ, কালিকাপুর, কামারকুড়ি, ছোটবেলালদহ, খুদিয়াডাঙ্গা, বুড়িদহ, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোকাহাটসংলগ্ন বেড়িবাঁধ, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, বটতলা বাজার, দ্বারিয়াপুর বেড়িবাঁধ, খুদিয়াডাঙ্গা পূর্বপারসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পাহারা দিচ্ছেন। এসব এলাকার মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিকভাবে আউশ ৮২৯ হেক্টর, আমন ৬০ হেক্টর এবং শাকসবজি ৭৫০ হেক্টর বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে। পানির চাপ বাড়তে থাকলে আরও নিমজ্জিত হবে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, ১০-১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যাকবলিতদের আশ্রয়ের জন্য স্কুল-কলেজ খোলা রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সার্বক্ষণিক তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুর নাগাদ শুকনো খাবার নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় পৌঁছাবে বলে জানান তিনি।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, পানির চাপ বেশি থাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট ভেঙে গেছে। চাপ বেশি থাকায় ভাঙা অংশ এখনই মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।