‘বাংলাদেশের রাজনীতি বদ্ধকূপে পরিণত হয়েছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি বদ্ধকূপে পরিণত হয়েছে। এই দমবন্ধ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার পথ তৈরি করে দিতে পারে তীব্র শ্রমিক আন্দোলন। প্রবীণদের অভিজ্ঞতার সার নিয়ে নতুনরা এ পথে এগিয়ে যাবে, নির্মাণ করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে নির্মিত হওয়ার পেছনে এবং সমাজ হিসেবে আজ পর্যন্ত আমাদের যা কিছু অগ্রগতি হয়েছে তার পেছনে আছে শ্রমিকের শ্রম, সংগ্রাম এবং সর্বোপরি শ্রমিক আন্দোলন যা বিভিন্ন পর্বে রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ ঠিক করে দিয়েছে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান রাজনৈতিকভাবে পরিণতি লাভ করেছে ৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে। কিন্তু এই গণঅভ্যূত্থানের মূল শক্তি এসেছে শ্রমিকের অংশ্রগ্রহণের ভেতর দিয়ে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে প্রবীণ শ্রমিক নেতা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী ও ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আতিউল ইসলামকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে এআলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘শ্রমিক আন্দোলনের একাল সেকাল’ বিষয়ে আলোচনা করেন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আতিউল ইসলাম ও গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবীণ শ্রমিক নেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী এবং শাহ আতিউল ইসলামের জীবন ও কাজের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন তাসলিমা আখতার। এরপর শ্রমিক নেতাদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও আলোকচিত্র তুলে দিয়ে সম্মাননা প্রদান করেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন গণসংতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

সহিদুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তৃতায় বলেন, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে শ্রমিক সংগঠনগুলো অনেক শক্তিশালী ছিল। ৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মসূচি সফল করার জন্য আদমজী, ডেমরা থেকে লাখে লাখে শ্রমিক বেড়িয়ে এসেছিল। ছাত্রদের শক্তিকে পূর্ণতা দিয়েছিল শ্রমিকের শক্তি। এই অভ্যূত্থানের ভেতর দিয়েই অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতার পথ। অভ্যূত্থানে বিজয় এসেছে, স্বাধীনতা এসেছে কিন্তু শ্রমিকের মুক্তি আসেনি।

শাহ আতিউল ইসলাম তার বক্তৃতায় বলেন, শ্রমিক সংগঠনকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনীতির লেজুড় হিসেবে। ফলে শ্রমিক সংগঠনগুলো দিন দিন রুগ্ন হচ্ছে, পথ হারাচ্ছে আন্দোলনের গতি। তিনি আরো বলেন, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু যারা এই প্রবৃদ্ধির মূল কারিগর সেই শ্রমিকরা এর সুফল পাচ্ছেন না।

অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, গার্মেন্ট খাত এখন শ্রমিকদের অন্যতম প্রধান খাতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ খাত একটি আন্তর্জাতিক খাত হিসেবে কারখানার মালিকরা আন্তর্জাতিক বৃহৎ পূঁজির শোষণের শিকার হচ্ছে। ফলে এ খাতের শ্রমিকরা আন্দোলন সংগ্রাম করেও মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারছে না। অন্যদিকে শ্রমিক সংগঠনগুলোও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে বিভিন্ন ভাগে। ফলে এই খাতের আন্দোলন এমনভাবে সংগঠিত করতে হবে যা এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top