প্রবল সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড় ফণীর আঘাত থেকে বাঁচতে উপকুলীয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দুর্গতদের জন্য সরকার খাবারের ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ শনিবার সকালে দলের এক কর্মসূচিতে এই অভিযোগ করে বলেন, উপকুলীয় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরকার কোনো খাবারের ব্যবস্থা করেনি এবং সেখানে যে রান্না করে খাবে সেটিরও কোনো জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষজনকে ওই ছোট্ট জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়েছে।
এই যে সাইক্লোন সেন্টার সেখানে এতো মানুষের নিজে রান্না করে খাবারের ব্যবস্থা নেই। এরজন্য সরকারেরই ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তারপরও সরকারের মন্ত্রী বড় বড় কথা বলছেন- আমরা নাকী এই যে দাবি করছি, এই যে আমরা বলছি, সরকার পদক্ষেপ নেয়নি, প্রধানমন্ত্রী কোনো পদক্ষেপ নেননি- এ কথায় উনারা উষ্মা প্রকাশ করেছেন, উনারা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন কেনো আমরা কথা বলছি।
মন্ত্রীদের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, বিরোধী দল তো কথা বলবেই, বিরোধী দল তো প্রতিবাদ করবেই, দাবি জানাবেই। আপনারা সরকার ধরে রেখেছেন, আপনারা ক্ষমতা আগলিয়ে রেখেছেন, আপনাদের দায়িত্ব এই দুর্গত মানুষদের আশ্রয় দেয়া, তাদেরকে খাবার দেয়া, তাদেরকে প্রাণের বাঁচানো। কারণ রাষ্ট্রের সমস্ত মেসিনারী আপনাদের হাতে।
রিজভী বলেন, কয়েকদিন ধরে আমরা বলছি, ফণী ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। সরকার তার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। আমরা আমাদের নেতা-কর্মীদেরও বলেছি, উপদ্রুত মানুষদের সাহায্যের জন্য, সহায়তার জন্য। আজকে দেখুন এই সকালের মধ্যে সারাদেশে নোয়াখালী, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ তারপরে সামুদ্রিক উপকুলীয় এলাকা সব মিলিয়ে ১৫ জন মানুষ কিন্তু ইতোমধ্যে মারা গেছেন। এটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। সরকারের দয়িত্ব এই দুর্গত মানুষের আশ্রয় দেয়া, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা, তাদেরকে প্রাণে বাঁচানো। আজকে যদি সেটা তারা করতেন তাহলে এভাবে মানুষ মারা যেতো না।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির জানিয়ে রিজভী বলেন, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে যেসব মামলা দেয়া হয়েছে এর সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্ট নাই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চান তাকে আটকিয়ে রেখে নির্বাচন করবেন। উনাকে ক্ষমতায় থাকতেই হবে, গণতন্ত্র জাহান্নামে যাক, সুষ্ঠু নির্বাচন চুলায় যাক- তাতে তার কিছু যায় আসে না।
তো যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। ক্ষমতায় থাকার জন্য এই সরকার সব ধবংস করে দিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া ধ্বংস করে দিয়েছে….। আমি তো বলি, সব তো পেলেন, গণতন্ত্রকে মাটি চাপা দিয়ে সব কিছু পেলেন এবার দেশনেত্রীকে সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য মুক্তি দিন।
কারাগারের একজনের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দুই তিন-দিন আগে একটি ঘটনা ঘটেছে-এটা কেনো গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়নি। কেনো হয়নি আমরা জানি না। কারাগারের মধ্যে অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায়কে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এতো বড় একটি ঘটনা।
আমরা যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করি, তাকে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে-এটার জন্য যে সংশয় প্রকাশ কী সাধে? কারণ কারগারের মধ্যে যে বন্দি তার নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু সেই দায়িত্ব এই সরকার পালন করেনি।
আমরা জানি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর (সাবেক এমপি) মৃত্যু কীভাবে হয়েছিলো। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারের মধ্যে আটকিয়ে রেখে মেরে ফেলা হয়েছে। তারপরে একটা নাটক করা হয়েছে যে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে সেখানে তিনি মারা গেছেন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই কারাগার সরকারে টর্চারিং মেসিনে পরিণত হয়েছে, মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। তাই দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে খালেদ জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই প্রতীক গণঅনশন হয়। সকাল ১১টা থেকে তিন ঘন্টার এই প্রতীক অনশন হয়। সংগঠনের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনশনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, যুগ্ম আহবায়ক বাহাউদ্দিন বাহার, মৎস্যজীবী দলের নাদিম চৌধুরীসহ তাঁতী দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।