মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বসাক পরিবারে যুবলীগ নেতার হামলার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। মানিকগঞ্জ জেলাসহ দেশ জুড়ে আলোচিত সংবাদ হয় ঘটনাটি।
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তে নামে পুলিশের কয়েকটি টিম। এ মামলার প্রধান আসামী আব্দুল খালেককে (৩৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। খবর পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীদের মাঝে স্বস্তির ছায়া লক্ষ্য করা গেছে।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মহিউদ্দিন আহম্মেদ, সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ হাফিজুর রহমান, সাটুরিয়া থানার ওসি মোঃ মতিয়ার রহমান মিঞা সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বসাক পরিবারের সাথে কথা বলেন। এ সময় ভুক্তভোগী পরিবারকে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন তারা।
এদিকে সোমবার বিকেলে দীপক বসাকের বাড়িতে যান বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন কমিটির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ্যাড. অসীম কুমার বিশ্বাস ও সাটুরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি সমরেন্দু সাহা লাহোর। অনাকাঙ্খিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। প্রধান আসামী আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচারের দাবী করেন তারা।
অপরদিকে ভুক্তভোগী পরিবারকে সহমর্মিতা জানাতে ছুটে আসেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্র বধূ এ্যাড. নিপুন রায় চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, এ্যাড. শাহিন রহমান, বিএনপি নেতা মো. আবুল বাশার, আব্দুস সোবাহান প্রমুখ। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যুবলীগ নেতা খালেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান নিপুন রায় চৌধুরী।
সাটুরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ও যুবলীগের কর্মী শাহীনুর ইসলাম ভান্ডারীপাড়ার দীপক বসাকের স্ত্রী টুম্পাকে অপহরণ করতে যায়। এ সময় যুবলীগ নেতা খালেকের সঙ্গে টুম্পার স্বামী দীপকের সাথে কথা কটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হলে দীপকের পরিবারের সদস্যরা যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেককে ঘরে তালা দিয়ে আটকে রাখে। এ সময় আঘাতে তার মাথার একাধিকস্থানে ফেটে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সাটুরিয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে যুবলীগ নেতাকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই হিন্দু পরিবারে হামলা করে খালেকের সমর্থকরা। হামলাকারীরা দ্বিপ বসাক, দীপক বসাক, দিনেশ বসাক ও দুলাল বসাককে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে সাটুরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন।
গৃহবধূ টুম্পা বসাকের স্বামী দীপক জানায়, তার স্ত্রী টুম্পা বসাক একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেন। প্রায় দুই বছর ধরে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যুবলীগ নেতা আবদুল খালেক তাকে উক্ত্যক্ত করে আসছিলো। মাঝে মধ্যে বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হলেও কোন লাভ হয়নি। যুবলীগ নেতার অত্যাচারে আমার স্ত্রী কিছুদিন আগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।
তিনি আরো জানান, শনিবার যুবলীগ নেতা খালেক আমার বাসায় গিয়ে বলেন, তোর স্ত্রী তোকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে। এ সময় বিয়ের প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি একটি স্বাক্ষরবিহীন স্ট্যাম্প দেখিয়েই আমার স্ত্রীর হাত ধরে দুই তলা থেকে নিচে টেনে হেঁচড়ে নামাতে থাকেন। তখন খালেকের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে যুবলীগ নেতার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হলে তিনি পড়ে যান। এতে মাথায় আঘাত পান যুবলীগ নেতা খালেক।
ভূক্তভোগী গৃহবধূ টুম্পা বসাক অভিযোগ করেন, আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে একাধিকবার যৌন হয়রানির চেষ্টা করে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাকে রাস্তায় উক্ত্যক্ত করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে একাধিকবার সাটুরিয়া থানাকে অবগত করা হয়েছে। যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় এর আগেও একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল।
এরপরও থেমে নেই। আমরা হিন্দু বলে আমাদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ করার কেউ না থাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করেছি। তিনি ও তার পরিবার ওই যুবলীগ নেতার হাত থেকে বাঁচতে চাই বলেও আকুতি জানান তিনি।
টুম্পার বাবা দিনেশ বসাক বলেন, আমরা সংখ্যালঘু বলে যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেকের ভয়ে চুপচাপ ছিলাম। সে আমাকেও হুমকি-ধামকি দিয়েছে। আমার মেয়ের নামে কিছু জমি আছে। সেই জমি ওই যুবলীগ নেতা দখল করে নিতে চায়। নিরুপায় হয়ে সাটুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে এ ব্যাপারে অনেকবার অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। সে শনিবার বাসায় এসে আমার মেয়েকে তুলে নিতে গেলে এ সংঘর্ষ হয়।
যুবলীগ নেতা আব্দুল খালেককে গ্রেফতারে কথা স্বীকার করে এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, দলীয় পরিচয় কেউ দোষীকে রক্ষা করতে পারবে না। তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।