শ্রীলঙ্কার সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি : ‘ভাবিনি এই লোকটা আমাদের মারতে এসেছে’

শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তগুলো ভুলতে পারছেন না, সেদিন আশপাশে থেকেও বেঁচে যাওয়া লোকজন। হামলার শিকার একটি হোটেলের ম্যানেজার এখনো ভাবতে পারছেন না, আমাদের আশপাশ দিয়ে হাঁটাচলা করা একটি লোকই এই হামলা চালিয়েছে। মৃত্যুর কারণ হয়েছে আরো অনেকের।

শ্রীলঙ্কার সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের ম্যানেজার রোহান কর বলেন, লোকটা খাওয়ার টেবিলের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। ভাবতেই পারিনি ওই আমাদের মারতে এসেছিল। হামলার আগের দিন ওই ব্যক্তি হোটেলে চেক ইন করেছিল।

কোনোরকমে বিস্ফোরণে বেঁচে যাওয়া হোটেলের ম্যানেজার শোনান সেই ভয়াবহ মুহূর্তের দৃশ্যগুলোর বর্ণনা। তিনি বলেন, লোকটা যখন হোটেল এসেছিল, তখন তাকে এক গ্লাস পানীয় দিয়েও স্বাগত জানানো হয়৷ সেটা পান করে সে তার রুমে চলে গিয়েছিল৷ হামলার দিন সকালে সে নিচে নেমে আসে। তার পিঠে একটা ব্যাগ ছিল। তারপর সে হোটেলের রেস্টুরেন্টে চলে যায় যেখানে লোকজন সকালের খাবার খাচ্ছিলেন। সে সময় ওই ব্যক্তি একেবারে মাঝখানের একটি টেবিলের কাছে চলে যায়। তার পিঠে ছিল একটি ব্যাগ। সে টেবিলে বসলো, খাওয়াদাওয়া করল। মূলত সে অপেক্ষা করছিল লোকজন বুফেতে আসার জন্য। যখন সে দেখলো রেস্তোরাঁ লোকজনে ভরে গেছে, তখনই বিস্ফোরণ ঘটায়। সত্যি কথা বলতে, আমরা কখনো ভাবিনি এই সেই লোক, যে আমাদেরকে মারতে এসেছে।

ওই দিন ম্যানেজার কোনোভাবে বেঁচে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু চোখের সামনে দেখেছেন হতাহতদের রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন দেহ।

শ্রীলঙ্কায় ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডেতে আত্মঘাতী হামলাকারীরা কিভাবে বেশ কয়েকটি হোটেল ও গির্জাতে হামলা চালিয়েছিল তার বিস্তারিত বিবরণ ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে। আটটি জায়গায় প্রায় একই সময়ে চালানো হয়৷ হামলার এক সপ্তাহ পর সিসিটিভির কয়েকটিও ভিডিও ফুটেজও প্রকাশিত হয়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একজন সন্দেহভাজন হামলাকারী তার পিঠে একটি বড় রুকস্যাক নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে কিভাবে নিগোম্বো শহরের একটা গির্জার ভেতরে গিয়ে ঢুকেছে। জনাকীর্ণ সেন্ট সেবাস্টিয়ান গির্জায় তখন ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলছিল। হেঁটে আসার সময় তাকে গির্জার বাইরে এক জায়গা কিছুক্ষণ থেমে একটি শিশুকে হাত দিয়ে আদর করতেও দেখা যায়।

তারপর গির্জার বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে গির্জার ভেতরে ঢুকে মোটামুটি সামনের একটি আসনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরই সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই গির্জায় নিহতের সংখ্যা একশোরও বেশি।

তদন্তে উঠে এসেছে ধারাবাহিক ৮টি বিস্ফোরণে জড়িত আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত ও বিত্তশালী পরিবারের সন্তান৷ জানা গিয়েছে হামলার মাস্টার মাইন্ড তথা এনটিজে গোষ্ঠীর উগ্র নেতা হাশিম দু বছর দক্ষিণ ভারতে কাটিয়ে গিয়েছে৷ তদন্ত চলছে৷ নতুন করে হামলার আশঙ্কা রয়েছে শ্রীলঙ্কায়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top