মাহমুদউল্লাহর চোট বিশ্বকাপ দলে জায়গা দিলো মোসাদ্দেককে

এবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করার আগে মোসাদ্দেকের নাম খুব একটা শোনা যায়নি। কিন্তু তিনিই কিনা জায়গা পেলেন বিশ্বকাপ দলে। এর জন্য অবশ্যই তাকে কৃতিত্ব দিতে হবে মাহমুদউল্লাহর কাঁদের চোটকে।

অথচ ক্লাবের পারফরমেন্স হিসেব করলে তার বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার কথা নয়। সোমবারও শূন্য হাতে ফিরেছেন। ক্লাব আবাহনীর হয়ে পাওয়া সে দুঃখ ভুলিয়ে দিলেন জাতীয় দলের নির্বাচকেরা। মঙ্গলবার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে ডাক পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। বিশ্বকাপের ১৫ জনে ডাক পাওয়ার পেছনে অবশ্য ব্যাটিং নয়, তার কাজ চালানো অফ স্পিনই বেশি ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অফ স্পিন বলে যে খুব একটা জাদু আছে মোসাদ্দেকের তা নয়। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও বোলারের চেয়ে ব্যাটিং সত্তাই বেশি উজ্জ্বল মোসাদ্দেকের। আবাহনীর হয়ে ১২ ম্যাচে মাঠে নেমে মাত্র ৮ বার বল হাতে নিয়েছেন। তাতে ২৩.৮৫ গড়ে ৭ উইকেট পেয়েছেন। ইকোনমি রেট অবশ্য সমীহ জাগানিয়া, ৩.৯৭। ব্যাটিংয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল মোসাদ্দেক। ১২ ইনিংসেই নামার সুযোগ পেয়েছেন। কালই প্রথম শূন্য হাতে ফিরেছেন।

এর আগে ১১ ইনিংসের মধ্যে ৫টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। একবার তো সেটা তিন অঙ্কেই নিয়েছেন। মাত্র ৭২.৯১ স্ট্রাইক রেটকে বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটে আদর্শ বলা না গেলেও ৪৭.৫৫ গড়ে ৪২৮ রানকে ভালো বলতেই হচ্ছে। যদিও লিগে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন—এমন আরও নয়জন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান রয়েছেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটের এই পারফরম্যান্স সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সম্ভাবনা, দুই মিলিয়েই শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন মোসাদ্দেক। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন—এমন সাতজনের একজন এই তরুণ অলরাউন্ডার। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল বলেছেন, ‘মোসাদ্দেক ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করেছে। আমরা একজন বিকল্প অফ স্পিনার অলরাউন্ডার চাইছিলাম। তা ছাড়া মাহমুদউল্লাহর কাঁধের চোট পুরো সেরে ওঠেনি। ফলে ও বোলিং করবে না। এখানে মোসাদ্দেককে আমরা কাজে লাগাতে পারব।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য নিজের প্রতিভার পুরোটা কখনোই দেখাতে পারেননি মোসাদ্দেক। ২৪ ম্যাচে খেলেছেন ২০ ইনিংস। তাতে মাত্র একটি ফিফটি। ৯ ইনিংসেই অপরাজিত থাকায় গড়টা বেশ সমৃদ্ধ দেখাচ্ছে—৩১। কিন্তু তার রান (৩৪১) ও স্ট্রাইক রেট (৭৮.২১) কোনোটাই আশাব্যঞ্জক নয়। আর যদি ইংল্যান্ডের কন্ডিশন বিবেচনা করা হয়, তাহলে পরিসংখ্যান আরও ভয় দেখাচ্ছে। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মাঠে ১০ ম্যাচ খেলেছেন মোসাদ্দেক। তাতে ৮ ইনিংসে ২৭.৮ গড়ে ১৩৯ রান তাঁর।

বোলিংয়েও যে আহামরি কিছু করেছেন তা নয়। ২২ ইনিংসে বল হাতে নিয়ে পেয়েছেন ১১ উইকেট। ৪১.২৭ গড় বা ৪৯.২ স্ট্রাইকরেট কোনোটাই খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাঠে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়ে মোসাদ্দেকের মাত্র ৩ ওভারের স্পেলের ভূমিকা ছিল। দুরন্ত গতিতে ছোটা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসকে থমকে দিয়ে মাত্র ১৩ রানে ৩ উইকেট পেয়েছিলেন মোসাদ্দেক। সর্বশেষ এশিয়া কাপেও তাঁর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ওভার স্পেলে মাত্র ৮ রানে ১ উইকেট পেয়েছিলেন।

ওয়ানডেতে ব্যাটের চেয়ে বল হাতেই এখন পর্যন্ত বেশি অবদান রেখেছেন মোসাদ্দেক। সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের পর তৃতীয় স্পিনার হিসেবেই তাই হয়তো সুযোগ পেলেন মোসাদ্দেক।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top