ভিসির পদত্যাগের দাবীতে ধারাবাহিক আন্দোলনের ১৪তম দিনে মহাসড়ক অবরোধ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা এগারোটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস এলাকার বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে করে মহাসড়কের দুইপাশে শত শত যানবাহন আটকা পরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে পাওয়ার দাবিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে অবরোধ কর্মসূচি তুলে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে দেড়ঘন্টা পর বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টায় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলার প্রধান ফটক আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে উপাচার্যর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলেও তা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যায়।
বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধের কারণে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সড়কের উভয়পাশে যানবাহনের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়। তবে কর্মসূচি চলাকালীন রোগী ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী যানবাহনসহ জরুরি কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম জানান, উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগেই মৌখিক আশ্বাসের আস্থার বিষয়টি হারিয়ে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, সড়ক অবরোধ কর্মসূচি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তুলে নেওয়া হয়েছে। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে দুপুর একটা থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর একটা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পেলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অপরদিকে পদত্যাগ কিংবা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন ববি উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হক।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় প্রতিবাদ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। এর প্রতিবাদে ২৬ মার্চ বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। ফলে কর্তৃপক্ষ অনিদিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন।
এরমধ্যেও শিক্ষার্থীরা ভিসি’র পদত্যাগের দাবিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রধান, ডিসি অফিস ঘেরাও, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল লিখন, ভিসির কুশপুতুল দাহ ও মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
পরবর্তীতে গত ৬ এপ্রিল বরিশাল সার্কিট হাউজে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত লিখিত এক নোটিশে গত ৭ এপ্রিল সকাল থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম চালুর ঘোষণা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা সে নোটিশ প্রত্যাখান করে ভিসির পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেন।
অপরদিকে রেজিস্ট্রারের দেয়া নোটিশের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৭ এপ্রিল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তারা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। রোববারের মতো সোমবার সকালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা একাডেমিক ভবনের সামনে আসলেও শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়ায় তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।