মাত্র ৫দিন আগেও চবি ছাত্রলীগের দুইটি পক্ষ ছিল একে অপরের প্রতিপক্ষ। চবিতে ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সংগঠন বিজয় ও সিএফসি। তাদের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ উভয়পক্ষের ৬জনকে গ্রেফতার করে। ওই ৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ ৪ দফা দাবিতে ছাত্রলীগের একে অপরের বিরোধী উভয়পক্ষ এক হয়ে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
রোববার সকাল থেকে অবরোধের ডাক দিয়ে শাটল ট্রেনের লোকোমাস্টারকে তুলে নিয়ে যাওয়া, শাটল ট্রেনের হুইশ পাইপ কেটে দেয়া, ক্যাম্পাসে পরিবহন পুলের বাসের ৩০টি বাসের চাকা কেটে ও সুপার গ্লু দিয়ে আটকে দেয়া, ক্যাম্পাসে প্রবেশের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া, ফ্যাকাল্টিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বাধা দান, ক্যাম্পাসের সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়াসহ পুরো ক্যাম্পাসকে অবরুদ্ধ এ সময় তাণ্ডব চালায় ছাত্রলীগ।
ক্যাম্পাস সূত্র জানিয়েছে, ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা প্রত্যাহার, প্রক্টরের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে রোববার ক্যাম্পাসে অবরোধ কর্মসূচির নামে তাণ্ডব চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশ। রোববার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। অবরোধের শুরুতেই চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে শাটল ট্রেনের কয়েকটি বগির হোস পাইপ কেটে দেয়ার ঘটনা ঘটে এবং ক্যাম্পাস অভিমুখী শাটল ট্রেন আটকে দেয়া হয়।
এরপর বেলা ১২টার আগে অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অবরোধকারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে পুলিশ এসে তাদের সরানোর চেষ্টা করলে অবরোধকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
এসময় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের শুরুতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্রলীগ কর্মীরাও জবাবে ইট ছুড়তে থাকে। তখন আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হলেও তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। আন্দোলনকারীদের ছোড়া ইটে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে কয়েকটি সূত্র জানায়।
এদিকে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে সকাল থেকে শিক্ষকদের আনার জন্য ক্যাম্পাস হতে কোনো বাস শহরে যেতে পারেনি। অবরোধের কারণে সকাল থেকে কোনো শাটল ট্রেন ও শিক্ষক চলাচল না করায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।
উল্লেখ্য, ‘বান্ধবীর’ ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে হাসির ‘রিয়েক্ট’ করা নিয়ে গত ৩১ মার্চ সংঘর্ষে জড়ায় শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক গ্রুপ ‘বিজয়’ ও ‘সিএফসি’ কর্মীরা। এই সংঘর্ষে আহত হয়েছিল তিনজন। সংঘর্ষের পরদিন বিভিন্ন হলে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গুলি ও দুটি বন্দুক এবং ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ২ এপ্রিল ক্যাম্পাসে আবারো সংঘর্ষে জড়ায় উভয়পক্ষ। তখন পুলিশ গিয়ে ছয়জনকে গ্রেফতার করে।
পরে ওই ছয়জনের মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ও সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীরর অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিজয় ও সিএফসি দুইপক্ষ এক হয়ে ক্যাম্পাসে অবরোধের ডাক দেয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের উপর্যুপরি সংঘর্ষের কারণে পুলিশ উভয়পক্ষের কয়েকজনকে গ্রেফতার করে; এখন তাদের মুক্তির দাবিতে দুই পক্ষের অবরোধে দিনভর অচল ছিল ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন,‘রোববারের এই পরিস্থিতি ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলাকারীদের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। তারা যদি যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমাদের কাছে আসে, তাহলে বিবেচনা করা হবে।’
এদিকে রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আখতারুজ্জামান নয়াদিগন্তকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে শতাধিক পুলিশ অবস্থান করছে।