কিছুটা হেলে পড়েছে এফআর টাওয়ার, ভবনের ভবিষৎ জানা যাবে ১৫০ দিন পর

আগুনের ঘটনার পর রাজধানীর বানানী এফআর টাওয়ার কিছুটা হেলে পড়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছে, আগামি পাঁচ মাস (১৫০দিন) এই ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না। এফআর টাওয়ারের ব্যবহারের উপযোগিতা খতিয়ে দেখতে রোববার বেলা ১১টার দিকে তদন্ত কমিটি ভবনটি পরিদর্শন করে। প্রাথমিক পরিদর্শন শেষে এ মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেহেদী আহমদ আনসারী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের টিওআর (কার্যপরিধি) হচ্ছে ভবনটি টিকিয়ে রাখা যাবে কি যাবে না। প্রধানত সাততলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানের কলামে ও স্ল্যাবে হালকা কিছু ক্র্যাক আছে। এটি কিছুটা হেলে পড়েছে। বিকেলে আমাদের আরেকটি টিম এসে কতখানি ক্র্যাক আছে তা নির্ধারণ করবে।’

‘কালকের (সোমবার) মধ্যে আমরা একটা রিপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করব। আমাদের মোটামুটি একটা আইডিয়া হয়েছে। ভবনের মধ্যে যেহেতু ভায়োলেশন আছে- বিল্ডিং কোড, ফায়ার কোড ফলো না করে বিল্ডিংটা করা হয়েছে- এটা একটা ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট।’

মেহেদী আহমদ আনসারী বলেন, ‘কমপ্ল্যায়েন্সের জন্য বিল্ডিং কোড ফলো করে যা যা করণীয় তা করার জন্য আমরা ১৫০ দিনের একটা টাইম ফ্রেম দেব। এর মধ্যে বিল্ডিংটি সংস্কার করেন, এটা কন্টিনিউ করার একটা প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছি।’

আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের তদন্তের মূল ইস্যু নয়। আমাদের যেটা মনে হচ্ছে শর্টসার্কিট হতে পারে। এজন্য বিল্ডিং কোড মেনে এটা করা হয়েছে কি-না, ইলেকট্রিক সেফটিটা ঠিক ছিল কি-না, সেই ডিটেইল অ্যাসেসমেন্টে যাচ্ছি। ওটা করলে বিল্ডিংয়ের তারে যদি কোনো সমস্যা থাকে, ফায়ারের প্রিভেনটিভ মেজার্সে কোনো সমস্যা থাকে, স্ট্র্যাকচারাল কোনো সমস্যা থাকে- সেগুলো চিহ্নিত করে ১৫০ দিনের মধ্যে একটা রিপোর্ট দেবে। এরপর সংস্কারমূলক কাজ করে এটাকে চালিয়ে নেয়া হবে।’

১৫০ দিন পর্যন্ত এই ভবন কি ব্যবহার করা যাবে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না। ইনিশিয়াল ১৫০ দিন, এই সময় বেশিও লাগতে পারে।’

মেহেদী আহমদ আরও বলেন, ‘১৫০ দিন পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব এ ভবনটি থাকবে কি থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ভবনটি ১৪ তলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল, এরপর আরও চারতলা পরে আরও দোতলা করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। এখন পর্যন্ত বনানীর আগুনের ঘটনায় নিহত হন ২৬ জন। এছাড়া বহু লোক আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এই দুর্ঘটনায় স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও একটি কমিটি গঠন করা হয়।

বিশেষজ্ঞ কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও সচিব (উন্নয়ন) এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রয়েছেন। কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে।

অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানসহ ঘটনার নানা দিক জানতে প্রত্যক্ষদর্শীদের অংশগ্রহণে বনানী থানা পুলিশের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমে গণশুনানি শুরু হয়েছে সকাল সোয়া ১০টার দিকে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কমিটি, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এই গণশুনানির আয়োজন করেছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top