স্পেনে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে যেভাবে হামলা হয়েছিল

গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে যে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল তাকে ‘বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেছে উত্তর কোরিয়া। এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রথম একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তের দাবি জানিয়ে তারা বলেছে, এর পেছনে যেসব গুজব শোনা যাচ্ছে সেগুলোও তারা খতিয়ে দেখছে।

এসব গুজবের একটি হচ্ছে, এই হামলার পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, তাদের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই পেছন থেকে এই হামলার কলকাঠি নেড়েছে; কিন্তু গত সপ্তাহেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বিরোধী একটি গ্রুপ দাবি করেছে যে মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে তারাই হামলাটি চালিয়েছে।

চেলিমা সিভিল ডিফেন্স নামের এই গ্রুপটি দাবি করেছে, মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস থেকে তারা কম্পিউটার ও তথ্য নিয়ে গেছে যেগুলো তারা এফবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছে। হামলার সাথে জড়িত ছিল বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদেরকে ধরতে ইতোমধ্যে দুটো আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ তারিখে স্পেনে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের উপর বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।’

কী হয়েছিল
স্পেন কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাড্রিয়ান হং চ্যাং নামের একটি গ্রুপ মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে ঢুকেছিল সেখানকার একজন কর্মকর্তার সাথে দেখা করার কথা বলে। ওই গ্রুপটি বলেছিল যে ওই কর্মকর্তার সাথে তাদের আগে কোথাও দেখা হয়েছিল। ওই কর্মকর্তারা সাথে তারা ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চায়।

এই গ্রুপের সদস্যরা ভেতরে ঢুকে পড়ে সেখানে হামলা চালায়। অভিযোগ উঠেছে যে ওই গ্রুপের সদস্যরা তখন উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে। তিনি যাতে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ ত্যাগ করেন সেজন্যে তারা তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে থাকে। এটা করতে অস্বীকৃতি জানালে তার হাত পা বেঁধে তাকে দূতাবাসের বেজমেন্টে ফেলে রাখা হয়।

এই গ্রুপের যে দুজন সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের এবং অন্য আরেকজন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরকে সেখানে কয়েক ঘণ্টার জন্যে জিম্মি করে রাখা হয়। তাদের মধ্যে একজন নারী ভেতরে থেকে পালিয়ে
বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।

জানালা দিয়ে বের হয়ে তিনি সাহায্যের জন্যে চিৎকার করতে থাকেন। তখন দূতাবাস ভবনের আশেপাশের বাসিন্দারা পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশের কর্মকর্তারা যখন সেখানে হাজির হন তখন অ্যাড্রিয়ান হং চ্যাং গ্রুপের সদস্যরা তাদের স্বাগত জানান। নিজেদেরকে তারা পরিচয় দেন উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিক হিসেবে। এসময় তারা কিম জং উনের ব্যাজ লাগানো জ্যাকেট পরিহিত ছিল। তারা পুলিশকে জানায় যে ভেতরে কিছু হয়নি, সবকিছু ঠিকঠাকই আছে।

পরে এই গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্য উত্তর কোরিয়ার তিনটি কূটনৈতিক গাড়ি নিয়ে দূতাবাস ছেড়ে চলে যান। বাকিরা পরে পেছনের গেট দিয়ে আরেকটি গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। আরো পরে তারা চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে রওনা দেয় পর্তুগালের উদ্দেশ্যে।

এর পাঁচদিন পর গ্রুপের একজন সদস্য, যিনি মেক্সিকোর নাগরিক কিন্তু থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, এফবিআই এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছে কিছু তথ্য তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার তদন্তের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা স্পেনের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, সুপরিকল্পিতভাবে এই হামলাটি চালানো হয়েছে। একটি ‘সামরিক শাখা’ ছিল এর পেছনে।

স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষও সন্দেহ করছে যে এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাত থাকতে পারে। জড়িত থাকতে পারে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ; কিন্তু সিআইএ এবিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

কারা সেই হামলাকারী
চেলিমা সিভিল ডিফেন্স গ্রুপটি ফ্রি জসেওন নামেও পরিচিত। তাদের উদ্দেশ্য উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা থেকে কিম সাম্রাজ্যকে উৎখাত করা। এই গ্রুপটির ওয়েবসাইটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে দূতাবাসে অনুপ্রবেশকারীদের একজন উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট নেতাদের ছবি ভাঙচুর করছে।

এই গ্রুপটির নাম প্রথম আলোচনায় আসে যখন কিম জং উনের সৎ ভাইকে হত্যা করার পর তার ছেলেকে তারা ছিনতাই করার দাবি করে। কিম জং উনের সৎ ভাই কিম জং ন্যাম মালয়েশিয়ার একটি বিমানবন্দরে ২০১৭ সালে হত্যা করা হয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top