কালামের মুখে যেন রা’ নেই। যেন কথা বলতেও ভুলে গেছে। সময় সময় দীর্ঘ নিশ্বাস। অপলক দৃষ্টিতে চেয়েই থাকেন শুধু। শনিবার ডিএনসিসি’র মাকের্টের আগুনে নিজের সাতটি দোকান চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়েছে। একদিন আগেও কালাম নিজের সংসারকে নিয়ে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতেন। একদিনেই সব শেষ।
দীর্ঘ ২০ বছর আগে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন কালাম মিয়া। প্রথমে ছোট দোকান দিয়ে শুরু করলেও নিজের সততা আর কর্মদক্ষতা দিয়ে আজ গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে গড়েছেন সাত সাতটি দোকান। মা’কে অনেক বেশি ভালবাসেন তিনি। দোকানের নামও তাই ‘মা রেক্সিন’।
এক নামে এই মার্কেটের সবাই চিনেন। কালামও সবার কাছেই বেশ পরিচিত। কালামের কোটি টাকার ব্যবসা। সদ্য হাস্যোজ্জ্বল কালাম আজ শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছেন। প্রকৃতি মানুষকে কতটা অসহায় অবস্থায় ফেলতে পারেন তা কালামকে দেখলে সহজেই বুঝা যায়।
ডিএনসিসি’র উত্তর পাশের প্রথম সারিতেই কালামের ৫ টি দোকান। প্লাস্টিক পণ্য আর কোকারিজের বিশাল সমাহার নিয়ে দৃষ্টিনন্দন ছিল তার দোকানের পসরা। এক বছর আগে নতুন আরো দুটি দোকান নিয়ে বড় ব্যবসা পেতেছেন একই মার্কেটের উত্তর পাশের গলিতে। সামনা সামনিই সবকটি দোকান। মূলধন কোটি টাকার বেশি। সুদের ভয়ে ব্যাংক থেকে লোনও নিতে আগ্রহী নন তিনি। কয়েক বছর আগে পবিত্র হজ্বও পালন করেছেন।
আজ দুপুরে তার দোকানে গিয়ে দেখা গেল প্লাস্টিক পণ্য সবগুলো পুড়ে ছাই হয়েছে। কোকারিজের কিছু পণ্য অবশিষ্ট থাকলেও সেগুলো ধোঁয়া আর তাপে কালচে রং ধারন করে বিক্রয় অনুপযোগী হয়ে গেছে।
অল্প কথায় কালাম নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানালেন, ২০১৭ সালের আগুনে তার কয়েক লাখ টাকার মালামাল পুড়ে কয়লা হয়েছে। পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে সেই ক্ষতির কিছুটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার আগুন। তবে এবারের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার মতো নয়। সব মিলিয়ে কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে কালামের।
তিনি আরো জানালেন, এর আগের বছরও সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে আর কিছুই করা হয়নি। এবারও কি করা হবে তাও পরিস্কার নয় তার কাছে। তার দাবি সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো।