ক্ষমতাসীনরা পুতুল সরকারের ভূমিকায় : মির্জা ফখরুল

র্তমান সরকার ‘পুতুল’ সরকারের ভূমিকার পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘এই সরকার জনগণের সরকার নয়, এরা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকার শুধু তাদের প্রভুদের হুকুম তামিল করার জন্য তারা একের পর এক নির্বাচনের প্রহসন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আমরা যদি সমগ্র বিশ্বের দিকে তাকাই, বিশ্বে বহু সরকার আছে যাদেরকে সোজা কথায় বলা হয় পাপেট গভমেন্ট, পুতুল সরকার। আজকে এই সরকারও কিন্তু পুতুল সরকারের ভূমিকা পালন করছে।’

এই অবস্থার থেকে উত্তরণে নবীনদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আজকে প্রবীণ-বৃদ্ধ-বয়স্ক। আমাদের সকলের বয়স প্রায় ৭০ তো পার হয়ে গেছে। আমাদের আজকে যে দায়িত্ব হচ্ছে, এই যুবক মধ্যে, এই তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেমকে ছড়িয়ে দেয়া। এই দেশপ্রেমকে ছড়িয়ে দিতে হলে আমাদের পথে পথে যেতে হবে, প্রান্তরে যেতে হবে, গ্রামে যেতে হবে।’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিসভা উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের শাহ আবু জাফর, আজিজুল হক লেবু কাজী, আবদুল হালিম মিয়া, মকসুদ আলী মঙ্গোলিয়া, খন্দকার সাজেদুর রহমান বাবুল প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান যেভাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীর রাজনীতিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্য যে দর্শন তাকে ছড়িয়ে দেবার জন্য যেভাবে গ্রামের গ্রামে ছুটে বেড়িয়েছেন, যেভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবার জন্য ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার জন্য চারণ কবির মতো গান গেয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার পথে প্রান্তরে। সেভাবে আমাদের প্রজন্মকে এই মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রামের গ্রামে গিয়ে জাগিয়ে তুলতে হবে গ্রামের মানুষদের, জাগিয়ে তুলতে হবে তরুনদের, জাগিয়ে তুলতে হবে যুবকদেরকে যে দেশ রক্ষা করো।

তিনি বলেন, ‘কিছু নেই এদেশে, কিচ্ছু নেই এখন আর। এখন আপনার সম্পূর্ণভাবে মিথ্যার উপরে, প্রতারণার উপরে। রাষ্ট্রের সমস্ত স্তম্ভগুলোকে ভেঙে দিয়ে, সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়ে এরা তার উপরে রাজত্ব করছে। আপনারা দেখুন, বিচার বিভাগ শেষ করে ফেলেছে, আপনারা দেখুন- আইন বলতে কিছু নেই। আপনারা দেখুন এই রাজনৈতিক দল হিসেবে এই রাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পরিচালনার কথা, কিন্তু আওয়ামী লীগ কি এই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে? তারা করছে না।’

‘নির্বাচন দেখেছেন- কারা করেছে, কি করেছে -আমরা সবাই জানি। আজকে প্রশাসনকে দিয়ে এই রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা আজকে সরকারি কর্মচারিদের বেতন বাড়াচ্ছে, সেনাবাহিনীর বেতন বাড়ছে, পুলিশের বেতন বাড়ছে, র‌্যাবের বেতন বাড়ছে, সিভিল প্রশাসনে যারা আছেন তাদের বেতন বাড়ছে। কিন্তু জনগনের কোনো আয় বাড়ছে না। উপরন্তু তাদের তো ট্যাক্স নেয়া হচ্ছেই বেশি করে। একই সঙ্গে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেল সব কিছু একের পর এক প্রতিবছর বাড়ানো হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এরা টিকে আছে মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে, এরা টিকে আছে মানুষের পকেটগুলো খালি করে তাদের পকেট ভর্তি করবার জন্যে। আজকে যে মেগা প্রজেক্ট-এর অর্থ কোত্থেকে আসছে? জনগণের পকেট থেকে। আজকে যে বিদ্যুতের কথা বলেন, বিদ্যুতের জন্য যেসব প্রকল্পগুলো করা হয়েছে এটা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে করা হয়েছে। এমনকি দুর্নীতি করার জন্য সেখানে তাদেরকে দায়মুক্তি আইন করেছেন যে, সেখানে তাদের বিচার হবে না, কেউ প্রশ্ন করবে যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে।’

বাকশাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে এ বিষয়টি ভীষণভাবে আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো এই দেশে। ’৭২-৭৫ সালে তারা যখন ব্যর্থ হয়েছিলো রাষ্ট্র পরিচালনা করতে তখন বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করে প্রথমে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইন, জরুরী অবস্থা করেছে। তারপরেও যখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি তখন তারা একদলীয় বাকশাল করেছে। সেই বাকশালের পেছনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য ছিলো না, বাকশালের পেছনে ছিলো ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার, ক্ষমতাকে ধরে রাখার।’

‘আজকে বলা হচ্ছে যে, বাকশাল নাকী ভালো একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। তারা (আওয়ামী লীগ) সব বিষয়গুলোকে পেছনে রাখার জন্য, অন্ধকারে রাখার জন্য, তাদের সব দুর্নীতি, কুকর্ম-অপকর্ম আড়াল করবার জন্য আবার তারা একদলীয় শাসনের আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। ১৯৭৫ সাল আর ২০১৯ সাল এক নয় বা ২০২০ সাল এক নয়। সে স্বপ্ন দেখছেন যে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা করে এখানে রাজত্ব চিরস্থায়ী করবেন, এদেশের জনগণ কোনোদিনই সেই অবস্থা মেনে নেবে না।’

কারাবন্দি অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে ও অন্যায়ভাবে আটকিয়ে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তার মুক্তির জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top