দলের নেতাকর্মীদের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিএনপি কঠোর নীতি গ্রহণ করছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ কিছু করলে অর্থাৎ নিয়ম ভাঙলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে চলমান উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের জন্য এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। অনেককে কারণ দর্শাও নোটিশও দেয়া হয়েছে।
এমনকি বিশৃঙ্খলার অভিযোগে নীলফামারী জেলা কমিটিও বিলুপ্ত করেছে বিএনপি। তবে যারা শোকজ নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিয়েছেন তাদের বহিষ্কার করেনি দলটি। বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই এই বহিষ্কারাদেশ দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় গতকালও ১৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তৃণমূলের ১২৮ নেতাকে বহিষ্কার করা হলো। যাদের বেশির ভাগই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন বলে অভিযোগ। এদের সাথে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় দুইজন আইনজীবীকেও গতকাল বহিষ্কার করা হয়।
বুধবার বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় নড়াইল, রংপুর, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরো ১৬ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। অর্থাৎ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের মাঠপর্যায়ে ১২৮ জন নেতা বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- নড়াইলের সহসভাপতি বাবু অশোক কুমার কুণ্ডু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সালেহা বেগম, লোহাগড়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো: ফরহাদ হোসেন অনু, চাঁদপুরের মহিলা দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রেবেকা সুলতানা, মৌলভীবাজারের জুরী উপজেলার সদস্য আজিবুন খানম, বড়লেখা উপজেলা মহিলা দলের সদস্য আমেনা বেগম ডলি, বড়লেখা উপজেলার প্রচার সম্পাদক মো: আবদুস কুদ্দস স্বপন।
এছাড়া কিশোরগঞ্জের দলের সদস্য কামরুন্নার লুনা, মহিলা দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আসমা বেগম, তাড়াইল উপজেলার সহসভাপতি আবুল কাশেম, নিকলী উপজেলার মহিলাবিষয়ক সম্পাদক রেখা আখতার, ভৈরব উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহসভাপতি বাবর আলী বিশ্বাস, ভোলাহাট উপজেলা মহিলা দলের সদস্য মোছা: রেশমাতুল আরজ রেখা ও মোছাঃ শাহনাজ খাতুন।
এ ছাড়া সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় অ্যাডভোকেট এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান ও অ্যাডভোকেট মনির হোসেনকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিধায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বর্তমান বিনা ভোটের সরকার ও অকর্মা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। এই সিদ্ধান্ত যারাই অমান্য করছেন বা করবেন তাদের বিরুদ্ধেই দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং নিবে। ইতোমধ্যে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা সবাই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত। কেউ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, বিএনপিতে বহিষ্কারের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। যেসব নেতাই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করবেন বা করছেন তাদের ব্যাপারে বিএনপির হাইকমান্ড এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আরো বেশকিছু নেতার নাম কেন্দ্রে জমা পড়েছে। তাদেরও বহিষ্কার করা হবে। বিশেষ করে গত ১০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অংশ নেয়ার কারণে বহিষ্কার করছে বিএনপি।
এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বহিষ্কার করা হয়েছে ৯ জনকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১০ জন, ১ মার্চ ১ জন, ৩ মার্চ ৮২ জন এবং ৫ মার্চ বহিষ্কার করা হয় আটজনকে। সর্বশেষ গতকাল বহিষ্কার করা হয় ১৮ জন নেতাকে। এদের প্রায় সবাই উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, দলের সিদ্ধান্তের কথা আগেই সব সাংগঠনিক জেলাকে জানিয়ে দেয়া হয়। যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবেন তাদের বহিষ্কার করা হবে, নির্দেশনা ছিল।
এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের নামের তালিকা জেলা কমিটিকে কেন্দ্রের কাছে জমা দিতে বলা হয়। পরে বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত আসে। তবে কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার আবেদন করলে দলের হাইকমান্ড বিবেচনা করবে বলে তিনি জানান।