অনশনরত ছাত্রীদের গভীর রাতে হেনস্তা গোলাম রাব্বানীর!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল সংসদ নির্বাচন বাতিল করে আবার নির্বাচন ও হল প্রভোস্টের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে বুধবার রাত ৯টায় হলের গেইটে আমরণ অনশনে বসেন পাঁচ শিক্ষার্থী। এদিকে অনশন শুরুর পর বুধবার গভীর রাতে অনশনরত ছাত্রীদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আর এই অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু’র নবনির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। বুধবার গভীর রাত দেড়টার দিকে নবনির্বাচিত জিএস এর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অনশনরত ছাত্রীদের হেনস্তা করেন বলে জানা যায়।

অনশনকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু’র নবনির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে হেনস্তা করেন।

অনশনকারী ছাত্রীদের একজন শ্রবণা শফিক দীপ্তি। তিনি অভিযোগ করেন, চারটি দাবিতে আমরা সুশৃঙ্খলভাবে অনশন করছিলাম। বুধবার গভীর রাতে গোলাম রাব্বানী তার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এখানে এসে আমাদের ও অনশনে সমর্থনকারীদের হেনস্তা করেন। আমরা মদ-গাঁজা খেয়ে আন্দোলন করছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া আমাদের(আন্দোলনকারীদের) চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের হুমকি দেন তিনি।

উল্লেখ্য, অনশনকারীদের মধ্যে চারজন বিভিন্ন প্যানেল থেকে হল সংসদে প্রার্থী ছিলেন। অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাফিয়া সুলতানা, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সায়েদা আফরিন, একই বিভাগের জয়ন্তী রেজা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ্রবণা শফিক দীপ্তি ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রমি খিশা। এদের মধ্যে জয়ন্তী রেজা প্রার্থী ছিলেন না।

অনশনরত ছাত্রীদের অন্য দাবিগুলো হলো- রোকেয়া হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীসহ সাতজন ও অজ্ঞাতনামা ৪০ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং আন্দোলনে অংশ নেয়া হলের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বুধবার রাত ৯টায় হলের প্রধান ফটকের সামনে তারা অনশন শুরু করেন। অনশন শুরু করার পর তাদের সমর্থনে হলের ফটকের ভেতরে ও বাইরে অবস্থান নেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা হল প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মোটরসাইকেলে করে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে রোকেয়া হলের সামনে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী। এসেই তিনি ছাত্রীদের হলের ফটকের বাইরে অনশন করা ও তাদের সমর্থকদের অবস্থান নিয়ে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলেন।

ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস মুঠোফোনে প্রক্টরকে জানান, হলের কিছু মেয়ে মধ্যরাতে গেট খুলে বাইরে অবস্থান করে অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন।

প্রক্টরের কাছে তিনি বলেন, এরা (শিক্ষার্থীরা) খুব ‘বাড়াবাড়ি’ করছে, স্যার। গার্ডিয়ান ডেকে এনে এদের সবাইকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খোদা হাফেজ করে দেন।

প্রায় পাঁচ মিনিটের কথোপকথনে ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস কয়েকবার প্রক্টরের কাছে একই দাবি জানান।

এ সময় প্রভোস্টের ‘পদত্যাগ’ দাবি করে ‘রোকেয়া হলের আঙিনা, তোমার-আমার ঠিকানা’ বলে স্লোগান দেন অনশনকারীদের সমর্থকেরা।

এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশরাত কাশফিয়া ইরা, বর্তমান সভাপতি ও ডাকসুর কমনরুম–বিষয়ক সম্পাদক লিপি আক্তার, হল সংসদের সদস্য সুরাইয়া আক্তারসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রী।

ডাকসুর জিএস রাব্বানীর কাছে তারা ‘অভিযোগ’ করেন, অনশনকারী ও তাদের সমর্থকদের কারণে হলের শিক্ষার্থীরা ‘ঘুমাতে পারছেন না, পড়তে পারছেন না’।

এসময় রাব্বানী হলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা অনশনকারীদের কয়েকজন সমর্থককে দেখিয়ে প্রশ্ন করেন, রাত দুইটার দিকে বোরকা, নেকাব পরা এরা কারা? ছাত্রী সংস্থা? শিবিরের কর্মী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের অবস্থান নিষিদ্ধ।

রাব্বানী আরো বলেন, বোরকা পরে মুখ ঢাকা মেয়েরা এখানে কেন? এরা শিবিরের ছাত্রী সংস্থার। তারপরেও তারা ক্যাম্পাসে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’।

এর আগে একই দাবিতে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত হলের ফটকের ভেতরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীদের এই অংশটি।

বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত এই ছাত্রীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানান তিনটি ছাত্রী হল সংসদের নির্বাচনে জয়ী হওয়া ২১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এ ব্যাপারে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, বিক্ষোভকারী ছাত্রীরা যেসব দাবি জানাচ্ছে, তা পূরণের এখতিয়ার আমার নেই। আমি কারও বিরুদ্ধে মামলা করিনি। অহেতুক ‘মিথ্যা গুজব রটিয়ে’ মঙ্গলবার রাতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top