নিচে হাঁটু পানি। সেই পানিতে লম্বালম্বি করে সাজানো হয়েছে একটার পর একটা বেঞ্চ। সে সব বেঞ্চ মাড়িয়ে ক্লাস রুমে ঢুকতে হয় কোমলমাতি শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পানি খাওয়া, টয়লেটে যাওয়ারও পথও ওই বেঞ্চ মাড়িয়ে। এক দুই দিন নয়, এভাবে প্রায় ১৫ বছর ধরে চলছে স্কুলটি। বছরের বেশির ভাগ সময় স্কুলের আঙ্গিনায় পানিতে ডুবে থাকে। আর বর্ষাকাল এলে দুর্ভোগের কোনো শেষ থাকে না। নারায়ণগঞ্জ শহরের কাছেই ফতুল্লার ৭২নং ইসদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
দূর থেকে স্কুলটির ভবন দেখে যে কেউ বলবে ভালোই তো চলছে । কিন্তু বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা গিয়ে হাঁটু সমান পানি বছর পর বছর থাকার খবরে অনেক হতভম্বই হন। তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনটি দূর থেকে দেখতে ঝকঝকে। তবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢোকার চেষ্টা করলেই চোখ কপালে উঠবে। বিদ্যালয় ভবনের সামনে পুরো এলাকাটি জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তবে তাই বলে কী বন্ধ থাকবে পাঠদান?
অভিনব এক পদ্ধতি বের করেছে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বেঞ্চের পর বেঞ্চ সাজিয়ে একটি সেতু তৈরি করেছে তারা। এই বেঞ্চ সেতুতে পার হয়েই স্কুলে ঢোকেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তবে স্কুলের সামনের এ জলাবদ্ধতার সমস্যাটি নতুন নয়। ২০০৪ সাল থেকেই এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষক জানান, আমরা এ দুর্ভোগের সমাধানের জন্য সবার কাছে সকলের কাছে গিয়ে জানানো হয়েছে। শিক্ষা অফিসার এসে দেখে গেছেন। সমাধানের ব্যাপারে তারা অপরাগতা জানিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে জানাতে বলেছেন। কিছুদিন আগে বেঞ্চ সেতু দিয়ে পার হতে গিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পড়ে গিয়ে ব্যথা পান। নির্বাচনের আগে আমরাই কিছু বালু ফেলেছি। তিনটি ক্লাসরুম এখনো পানির নিচে। সেগুলো বন্ধ অবস্থাতেই রয়েছে।
শিক্ষার্থী মরিয়ম বেগম জানান, পুরো বছর আমরা বেঞ্চ মাড়িয়ে ক্লাসে ঢুকি, পানি খেতে যাই টয়লেটে যাই। বিদ্যালয়ের পরিবেশে দেখে আমাদের খুবই খারাপ লাগে।
বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষক লতিফা নাহার জানান, ১৯৭৩ সালে ৩৩ শতাংশ জমির জমির উপর ৫ জন শিক্ষক নিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রাক শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৪৫ জন্য শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে তিন জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। স্কুল ভবনটিতে ১৪ টি কক্ষ ও ১৪ শিক্ষক নিয়ে স্কুল পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্কুলের এ জলাবদ্ধতার সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানকে স্কুলটির জলাবদ্ধতা সমস্যার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও বলেছে। কিন্তু সমস্যাটির কোনো সমাধান হয়নি। বর্ষাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কোনো অন্ত থাকে না। এ সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।
স্কুল কমিটির সভাপতি আব্দুল আওয়াল জানান, জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ড্রেন হয়ে গেলে আশা করি এই সমস্যা আর থাকবে না। এ ব্যাপারে এলাকার মেম্বারের সাথে কথা হয়েছে।