ভারতের সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এবার সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী এপ্রিল ও মে মাসে মোট সাত ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১১ই এপ্রিল থেকে ১৯মে’র মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনের মাধ্যমেই গঠিত হবে নতুন লোকসভা। তবে নির্বাচনের ভোট গণনা হবে আগামী ২৩শে মে অর্থাৎ সেদিনই জানা যাবে বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদী আবারও ক্ষমতায় আসবেন কি-না।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে আছে কংগ্রেস ও বেশ কিছু আঞ্চলিক দল। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর প্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট গড়েছে দুটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন হবে ২৭২ আসন।
১. অবিশ্বাস্য রকম বিশাল আয়োজন
প্রায় ৯০ কোটি ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন এবং এজন্য ভোট কেন্দ্র থাকবে দশ লাখেরও বেশি। ভারতের ভোটার সংখ্যা যৌথভাবে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার বেশি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ৬৬% ভোটার ভোট দিয়েছিলো এবং ৪৬৪টি দলের ৮ হাজার ২৫০ প্রার্থী সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলো।
২. দীর্ঘ সময়
এবার ভোট হবে ১১, ১৮, ২৩ ও ২৯ এপ্রিল এবং ৬, ১২ ও ১৯শে মে। কিছু রাজ্যে ভোট হবে কয়েক ধাপে।
ভারতের প্রথম নির্বাচন হয়েছিলো ১৯৫১-৫২ সালে এবং সেটি শেষ করতে সময় লেগেছিলো তিন মাস। ১৯৬২ থেকে ৮৯ সালের মধ্যকার নির্বাচনগুলোতে সময় লেগেছিলো ৪-১০দিন। সবচেয়ে কম চারদিন সময় লেগেছিলো ১৯৮০ সালের নির্বাচনে।
৩. প্রচুর অর্থ ব্যয় হবে
ভারতীয় একটি সংস্থার হিসেবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দল ও প্রার্থীরা ব্যয় করেছিলো প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। ভারতের নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোকে তাদের আয়ের উৎস প্রকাশ করতে হয়।
গত বছর মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড ছাড়ে যা ব্যবসায়ী ও অন্য ব্যক্তিদের পরিচয় গোপন রেখে চাঁদা দেয়ার সুযোগ করে দেয়। দাতারা ইতোমধ্যেই ১৫০ মিলিয়ন ডলার এই বন্ডের মাধ্যমে দিয়েছে এবং খবর অনুযায়ী এর সিংহভাগই গেছে বিজেপির কাছে।
৪. নারীর হাতে সুযোগ থাকবে?
২০১৪ সালের নির্বাচনে নারী ও পুরুষের ভোটারের ব্যবধান ছিলো খুব কম।নারীদের ভোট দেয়ার হার ছিলো ৬৫.৩%। আর পুরুষের ছিলো ৬৭.১%। দলগুলোও নারীদের গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে। তাদের জন্য থাকছে নানা প্রতিশ্রুতি- শিক্ষা লোন, ফ্রি রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার, মেয়েদের জন্য সাইকেল: এমন অনেক কিছু।
৫. নরেন্দ্র মোদী
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই বিজেপি ২৮২টি আসনে জিতে নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছিলো। সেটিই ছিলো প্রথমবারের মতো বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া। এ বিশাল জয়ের কৃতিত্ব যায় মোদীর ঘরে এবং তিনি চিত্রিত হন পরিশ্রমী নেতা হিসেবে।
অনেক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করা নিয়ে অসুবিধায় থাকলেও নরেন্দ্র মোদীই এখন বিজেপির প্রধান ভোট সংগ্রাহক। তার সাথে রয়েছে দলের মধ্যে তার বিশ্বস্ত একটি অংশ যেমন অমিত শাহ। বিরোধী পক্ষেরও তাই টার্গেট মি. মোদী।
৬. ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দলের আশা
১৩৩ বছরের পুরনো কংগ্রেস কি ফিরে আসতে পারবে ক্ষমতায়? এটিই এখন বড় প্রশ্ন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শোচনীয় হার মানতে হয়েছিলো তাদের। মাত্র ৪৪টি আসন পেয়েছিলো তারা। পরের চার বছরে অনেক রাজ্য নির্বাচনেও হেরেছে তারা।
তবে গত ডিসেম্বর থেকে দলটি শক্তি পুনরুদ্ধারের দিকে যেতে পারছে বলে মনে হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জয় পেয়েছে। তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেছে।
৭. অর্থনীতিই মূল বিষয়
মোদী সরকারের সময়ে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি কিছুটা গতি হারিয়েছে। শস্যের দাম পড়ে যাওয়ার ঘটনা কৃষকদের দারুণ ক্ষুব্ধ করেছে। ২০১৬ সালের নোট নিষিদ্ধের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আর সার্ভিস ট্যাক্স ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে।
ভাটা এসেছে রপ্তানি আয়েও। তাই বেড়েছে বেকারত্ব। কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ঋণের দায়ে ডুবতে বসেছে। অথচ ভারতের জিডিপি অন্তত ৭ শতাংশ হারে বাড়া প্রয়োজন।
নরেন্দ্র মোদী বলেছেন অর্থনীতিতে সংস্কারের কাজ চলছে। যদিও নির্বাচনেই প্রমাণ হবে যে সেটি করার সময় তিনি আর পাবেন কি-না।
৮. দলগুলো লুফে নিবে জনপ্রিয় ইস্যুগুলো
নরেন্দ্র মোদীর সরকার সরাসরি কৃষকদের ঋণ বা ঋণ মওকুপ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পিছিয়ে পড়াদের জন্য চাকরিতে কোটার কথাও বলছেন তিনি। রাহুল গান্ধী তার দল জিতলে গরীবদের একটি ন্যুনতম আয়ের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন।
৯. জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গ
সমালোচকদের মতে মোদীর হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ভারতকে বিভক্ত করেছে। যদিও তার সমর্থকরা এতে বেজায় খুশি। ভারতের ১৭ কোটি মুসলিম, অনেকে মনে করেন , যে তারা অদৃশ্য সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
বিজেপির কোনো মুসলিম এমপি নেই। তবে ২০১৪ সালে সাতজন মুসলিমকে প্রার্থী করেছিলো তারা যদিও তার সবাই পরাজিত হয়েছেন।
১০. পাকিস্তান ইস্যু
পাকিস্তানে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা নরেন্দ্র মোদীকে একটি শক্তিশালী ইমেজ দিয়েছে। এটা পরিষ্কার যে জাতীয় নিরাপত্তাকেই মোদী নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান বিষয় বানিয়েছেন। যদিও এটি কতটা কাজ করবে তা পরিষ্কার নয়।
১১. যুদ্ধক্ষেত্র: উত্তর প্রদেশ
উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশ জাতীয় রাজনীতিতেও বেশ প্রভাবশালী। এখান থেকে ৮০ জন যাবেন ভারতের পার্লামেন্টে। আবার ভারতে সামাজিকভাবে সবচেয়ে বিভক্ত রাজ্যও এটি।
২০১৪ সালে বিজেপি ৭১ আসনে জিতেছিলো। তবে এ রাজ্যে এবার এক হয়েছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মায়াবতী ও অখিলেশ যাদব। তারা ৫০টির বেশি আসন পাওয়ার আশা করছেন যার মাধ্যমে দিল্লী জয়ের পথ বাধাগ্রস্ত হবে বিজেপির জন্য।
যদিও মোদী সমর্থকরা আশা করছেন শেষ পর্যন্ত মোদী এ জোটকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হবেন।