সরকারি দলের এমপি মন্ত্রীদের ব্যবসা বাড়াতেই নতুন করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্ট জ্বলানি বিশেষজ্ঞ ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক শামসুল আলম ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) যেখানে কোন ক্ষমতাই নেই গণশুনানি করার সেখানে তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির মতো গণবিরোধী কাজটি করছে।
তিনি আরো বলেন, কাল সোমবার গণশুনানির নামে একটি নাটক হবে এবং সেখানে জনমতের কোন মূল্যায়নই তারা করবে না। বিইআরসি সরকারের ইচ্ছা মাফিক পুনরায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুধু ঘোষণাটিই দেবে।
আজ রোববার গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি আয়োজিত জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ডায়ালগ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ম তামিম, অধ্যাপক সামসুল আলম, সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম প্রমুখ। এছাড়া জ্বালানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বলানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেছেন, মানুষ এখন নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ পেতে চায়। প্রয়োজনে বেশি দাম দিয়ে হলেও তারা এটা পেতে চায়। অনুষ্ঠানে তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও জানান।
অধ্যাপক শামসুল আলমের মতে, আইন অনুযায়ী একবার মূল্যবৃদ্ধির ১২ মাসের মধ্যে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাাব দিতে পারে না সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। আর যদি দেয়ও, তাহলে বিইআরসি তা বাতিল করে দেবে, শুনানি করার সুযোগ নেই।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর এই জ্বালানি উপদেষ্টা আরো বলেন, বিইআরসির বিরুদ্ধে গণশুনানির করার এখতিয়ার আছে কিনা এটি নিয়ে অন্তত ১০ টি মামলা রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা সব কিছুকেই যেন থোরাই কেয়ার করছে।
তিনি স্পষ্ট করেই বলেন, যেখানে সরকারের মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে এমনকি প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার অনেকেই ব্যবসার সাথে জড়িত। আামরা এর অনেক প্রমাণও দিয়েছি। তাদের ব্যবসা বাড়াতেই বিইআরসি’র মাধ্যমে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এই ঘোষনা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য রান্নাঘরে যাদের গ্যাসের চুলা একটি, তারা এখন মাসে বিল দেন ৭৫০ টাকা। যাদের বাসায় দুই চুলা, তারা বিল দেন ৮০০ টাকা। আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস বিল বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। এই প্রস্তাব নিয়ে আগামীকাল সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গণশুনানি করবে বিইআরসি। এতে কোম্পানিগুলোর দেওয়া প্রস্তাব অনুমোদন হলে এক চুলার জন্য গ্রাহকের ব্যয় হবে ১০০০ টাকা, দুই চুলার ক্ষেত্রে ১২০০ টাকা।
তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভে থাকলে বিইআরসির আইন অনুযায়ীই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে না। দেশে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি একটি। আর বিতরণ কোম্পানি তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলীসহ ছয়টি। এর মধ্যে একটি (সুন্দরবন) ছাড়া বাকি পাঁচটি কোম্পানিই লাভে রয়েছে। একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএলও লাভে আছে। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে আইনের লঙ্ঘন হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।