বাংলাদেশের আদিবাসী ও দলিতদের সাংবিধানিক স্বতন্ত্র পরিচয় প্রদান করে তাদের অধিকার প্রদানে আইনী ও সাংবিধানিক কাঠামো শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিশেষ করে, সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিতে আদিবাসী ও দলিতদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে খসড়া বৈষম্য বিলোপ আইন কার্যকর করাসহ ১৩ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার ও সেবা প্রদানে বৈষম্য এবং সেবা প্রদানে শুদ্ধাচারের নানাবিধ ঘাটতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী: অধিকার ও সেবায় অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক প্রণীত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রোববার টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি ও সুপারিশ উত্থাপন করে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া। গবেষক দলের অপর সদস্যরা হলেন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মোস্তফা কামাল এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম।
গবেষণাটিতে বাংলাদেশের সংবিধান, আন্তর্জাতিক সনদ, বিভিন্ন নীতি-কৌশল, আইন ও বিধিমালা বিশ্লেষণ করে আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার ও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি অধিকার পূরণ ও সেবাগ্রহণে নানা বৈষম্য এবং সেবা প্রদানে শুদ্ধাচারের ঘাটতিসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ভূমি অধিকার, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা প্রাপ্তি, ভোটাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, চাকুরীক্ষেত্র ও অন্যান্য সেবাসমূহে আদিবাসী ও দলিতদের নানাবিধ বৈষম্যের শিকার হওয়া, অস্পৃশ্য হিসেবে বিবেচনা, বিরূপ আচরণ ও নানাবিধ বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে সেগুলো নিরসনে সুপারিশ করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, আদিবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তা, দলিতদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের নানা কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আদিবাসী ও দলিতদের ‘বাদ পড়া’ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিতকরণ, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে দুর্গম এলাকার আদিবাসীদেরকে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয় এবং সে অনুযায়ী কর্মকাঠামো ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়া প্রণয়নের মত ইতিবাচক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিসমূহে আদিবাসী ও দলিতদের জাতিস্বত্ত্বা ও বর্ণভিত্তিক পরিচয়, ঐতিহাসিক বঞ্চনার বিষয় ও অধিকার যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত এবং স্বীকৃত নয়।
যেমন: বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীদের পৃথক জাতিস্বত্ত্বা এবং দলিতদের পরিচয়ের স্বীকৃতি না থাকা; জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সনদ ২০০৭ এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী সংক্রান্ত আইএলও সনদ ১৯৮৯-এ স্বাক্ষর না করা; আদিবাসীদের ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিতকরণ ও সংজ্ঞায়ন এবং দেশে পঞ্চাশের অধিক ভিন্ন ভিন্ন জাতিস্বত্ত্বার বসবাস থাকলেও মাত্র ২৭টি ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর’ নাম উল্লেখ; হরিজনরা দলিতদের অন্তর্ভুক্ত হলেও দলিত ও হরিজনদের পৃথকভাবে চিহ্নিতকরণ এবং সংজ্ঞায়নে উভয় গোষ্ঠীকে শুধু পরিচ্ছন্নতা কাজের সাথে যুক্ত বলে উল্লেখ করা; দলিত পরিবারের শিশুদের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করা; সমতলের আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কার্যক্রম উল্লেখ না করা; সমতলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকার এবং তাদের অবস্থার উন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা প্রণয়নের উল্লেখ না থাকা; দলিতদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করা; আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার সম্পর্কে স্বীকৃতি না থাকা; খাসজমিতে বসবাসরত আদিবাসী ও দলিতদের ভূমি অধিকারের বিষয়টির উল্লেখ না থাকা; ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংস্কারের দাবি অগ্রাহ্য করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরিতে সকল কোটা রহিতকরণের ফলে ‘উপজাতিদের’ জন্য ৫% কোটাও বিলীন করে দেয়া ইত্যাদি।
গবেষণা অনুযায়ী, শিক্ষাক্ষেত্রে আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী বিদ্যালয়ে ভর্তি, নিজস্ব ভাষায় ও নিজ ধর্ম শিক্ষা বিষয়ে পাঠগ্রহণ এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে অর্ন্তভুক্তিতে বাধার সম্মুখীন হয়। এছাড়া দলিত শিক্ষার্থীদের দিয়ে টয়লেট পরিস্কার করানো, সহপাঠি ও শিক্ষকদের নানা কটুক্তি ও বিরূপ আচরণসহ তাদের ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব করার মত বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিশ্চিত না করা, পাড়ায় টিকা ক্যাম্প স্থাপন না করা, অস্পৃশ্যতা’র চর্চা থেকে রোগীকে স্পর্শ না করে ও ‘চেক-আপ‘ না করেই ওষুধ লিখে দেয়া, তুচ্ছজ্ঞান করে হাসপাতালের প্রাপ্য নানা সেবা ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার চিত্র দেখা যায়। ভূমি অধিকারের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ও উন্নয়নের নামে বনভূমিতে আদিবাসীদের অধিকার খর্ব করা হয় এবং এর প্রতিবাদ করলে হত্যা, হয়রানিমূলক মামলা ও উচ্ছেদ করার মত ঘটনাও ঘটে।
এছাড়া তাদের খাস জমি বরাদ্দ না দেয়া এবং দখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারে সহায়তা না করার মত অভিযোগও পাওয়া যায়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ক্ষেত্রেও আদিবাসী ও দলিতরা বৈষম্যের স্বীকার হয়। তাদের যথাযথভাবে যেমন কর্মসূচির তালিকাভুক্ত করা হয় না তেমনি দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান না করে স্বচ্ছলদের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ধর্মীয় উৎসবের সময় সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম থেকে তাদের সহায়তা প্রদান করা হয় না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও তারা মূলধারার ক্ষমতাবানদের পক্ষাবলম্বন, উন্নয়ন কর্মকা-ে অর্ন্তভুক্তি ও সহায়তা প্রদানে অবহেলা, পুনর্বাসন না করেই উচ্ছেদ ইত্যাদি নানাবিধ বৈষম্যের স্বীকার হয়।
আদিবাসী ও দলিতদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় দেখা যায়, মূলধারার জনগোষ্ঠীর মতই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি, সামাজিক নিরাপত্তা, চাকুরী প্রাপ্তি, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেবা প্রাপ্তি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, শুধুমাত্র তাদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের জন্যই তারা মূলধারার জনগোষ্ঠীর তুলনায় আরো বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়। বিভিন্ন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, কাজ সম্পাদনে সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি, বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধার বিষয়ে যথাযথভাবে অবহিত না করা, স্বজনপ্রীতি করে বৃত্তি-সহায়তা ইত্যাদি পছন্দের লোকদের প্রদান করা ইত্যাদি নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপক শিকার হয় আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠী।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ইতিবাচক অগ্রগতি স্বত্ত্বেও বাংলাদেশে আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার ও সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বঞ্চনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হওয়ার চিত্রটি বেশ প্রকট। এক্ষেত্রে আইনী ও সাংবিধানিক কাঠামোতেও দুর্বলতা রয়েছে। কারণ সংবিধানে একদিকে বলা হয়েছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার। অন্যদিকে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক কোন স্বীকৃতি আমরা দেখি না। এমনকি আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারেও প্রশাসনিক বিধিনিষেধ প্রদান করা হয়েছে। তবে আমরা বলছি না যে, এক্ষেত্রে কিছুই অগ্রগতি হয় নাই। কিছু ইতিবাচক দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি যেগুলো আরো শক্তিশালী, আরো জোরালো, আরো আইনী সংস্কার হওয়া দরকার। আমাদের সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তার তুলনায় আদিবাসী ও দলিতদের অবস্থান বিবেচনায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আর এটা শুধু সাংবিধানিক অঙ্গীকারই নয় বরং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারেও অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে। আদিবাসী ও দলিতদের পেছনে রেখে অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়ন অসম্ভব। একইভাবে অসম্ভব টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ অর্জন- যেখানে বলা হয়েছে ‘কাউকে উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে পেছনে রাখা যাবে না’।’
আদিবাসী ও দলিতদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর গুরুত্ব দিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ‘যেই দেশ পরিচয়ভিত্তিক শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে সেই দেশে আদিবাসী ও দলিতদের পরিচয় সাংবিধানিকভাবে স্বীকার করা হবে না সেটা মেনে নেয়া যায় না। তাই সংবিধানে আদিবাসী ও দলিতদের স্বতন্ত্র ও আলাদা পরিচয় নিশ্চিত করতেই হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য ১৩ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আদিবাসীদের পৃথক পৃথক জাতিস্বত্ত্বা এবং দলিতদের পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং আদিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদসমূহে স্বাক্ষর নিশ্চিত করা; যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো চিহ্নিত করে বিদ্যমান আইন ও নীতিসমূহকে আদিবাসী ও দলিতদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক করা; খসড়া বৈষম্য বিলোপ আইন চূড়ান্ত করে এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা; সকল আদিবাসী এবং অবাঙ্গালী দলিত শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যবই প্রণয়ন ও পাঠদানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করা; সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদিবাসী ও দলিতদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে সেবাপ্রদানকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চা পরিবর্তনের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন এবং তাদের জমির মালিকানা সমস্যার কার্যকর নিষ্পত্তি; আদিবাসী ও দলিতদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও মর্যাদার উন্নয়নে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পদক্ষেপসমূহ কার্যকর করতে জনঅংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কাঠামো তৈরি ও সেগুলোর চর্চা নিশ্চিত করা।
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত সময়কালে এই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ব্যতীত আদিবাসী ও দলিত অধ্যুষিত জেলাসমূহকে (৩৩টি আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা এবং দলিতদের ক্ষেত্রে সকল জেলা) পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে তাদের মধ্য থেকে কাঠামোবদ্ধ দৈবচয়ন পদ্ধতিতে উভয় জনগোষ্ঠীর জন্য পৃথকভাবে ১৪টি করে মোট ২৮টি জেলা নির্বাচন করে নির্বাচিত আদিবাসী অধ্যুষিত ১৪টি জেলা থেকে একটি করে উপজেলা এবং দলিত অধ্যুষিত ১৪টি জেলা থেকে একটি করে উপজেলা বাছাই করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে মূলত প্রশাসনিক বিভাগসমূহের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়েছে। উপজেলাসমূহ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দৈবচয়ন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে। বাছাইকৃত উপজেলা থেকে স্থানীয় অংশীজনদের সাথে পরামর্শক্রমে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে ভিন্ন ভিন্ন জাতিস্বত্ত্বার আদিবাসী ও ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের দলিতদের নির্বাচন করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে প্রায় আটশ আদিবাসী ও দলিত প্রতিনিধি, মূলধারার জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় অংশীজনসহ বিভিন্ন স্তরের তথ্যদাতার সাথে নিবিঢ় সাক্ষাৎকার ও দলীয় আলোচনা ও অন্যন্য গুণবাচক গবেষণা কৌশল ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্যে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। সেগুলো হলো: ভিন্ন জাতিস্বত্ত্বা ও বর্ণভিত্তিক পরিচয়ের কারণে নানা ধরনের বঞ্চনার মধ্য দিয়ে পিছিয়ে রাখার ধারাবাহিকতা এবং অধিকার নিশ্চিতে ও সেবায় অন্তর্ভুক্তিতে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আদিবাসী ও দলিতদের আরও পিছিয়ে রাখার সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করা; জাতিস্বত্ত্বা ও বর্ণভিত্তিক পরিচয়ের কারণে অধিকার ও সেবা প্রাপ্তিতে দালিতরা কী ধরনের বৈষম্য ও দুর্নীতির শিকার হয় এবং তার ব্যাপ্তি কতটুকু সে বিষয়ের অনুসন্ধান করা; আদিবাসী ও দলিতরা অধিকার ও সেবা প্রাপ্তিতে যে বৈষম্য ও দুর্নীতির সম্মুখীন হয় তার ওপর আলোকপাত করে যথাযথ সুপারিশ প্রদান করা।