ডাকসু নির্বাচন : কে জিতবে, চলছে নানা সমীকরণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সোমবার। স্বাধীন দেশে এটি ডাকসুর অষ্টম নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নির্বাচন আদৌ সুষ্ঠু হবে কিনা- এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনার বিষয় অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স।

নির্বাচন উপলক্ষে ১৮ হলে ১১৩টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে এ ক্যামেরার ব্যবহার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতো কিছুর মধ্যেও শেষ মুহূর্তে এসে চলছে নানা সমীকরণ।

ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) প্রার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরু বলেছেন, দেশে নির্বাচন নিয়ে যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সংস্কৃতির মধ্য থেকেই ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের একটি দাবিও মানেনি প্রশাসন। পরিস্থিতি দেখে আমরা নির্বাচন বর্জনও করতে পারি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে একাধিকবার প্রহারের শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি অরাজনৈতিক সংগঠনের (কোটা সংস্কার) নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি ও তার সতির্থরা। সেই আলোচনাকে কাজে লাগিয়েই তারা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে থেকে ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নুরুল হক বলেন, আমরা হলের বাইরে বুথ করার দাবি করেছিলাম, প্রশাসন মানেনি। সরকার দলীয় সংগঠন ছাড়া সবাই এই দাবি করেছিল। আমরা আস্থাভাজন শিক্ষকদের দিয়ে বিশেষ কমিটির দাবি করেছিলাম, যারা মনিটরিং করে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু আমাদের কথা শুনলো না প্রশাসন। গণমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একটি মিডিয়া হাউজ থেকে মাত্র দুইজন সংবাদকর্মীকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে খবর সংগ্রহে। অথচ ক্যাম্পাসে আবাসিক হলই আছে ১৮টি, যার প্রতিটিতেই নির্বাচন হবে। প্রশাসনের ভূমিকায় আমরা হতাশ।

নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা সাধারণের অধিকার নিয়ে কথা বলছি, আন্দোলন করছি। ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আমাদের আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত আছেন। এমনকি সরকার দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারাও আমাদের আন্দোলনে শরিক ছিলেন। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পেরেছি। ব্যক্তি স্বার্থে বা রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে আমরা আন্দোলন করেনি। আমাদের ন্যয্য দাবির প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, তার জবাব দিতেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোট সুষ্ঠু হলে ডাকসুতে সাধারণরাই পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে বিজয়ী হবে।

নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবেন কি না? -এমন প্রশ্নের জবাবে এই ছাত্রনেতা বলেন, পরিস্থিতি বুঝে আমরা ভোট বর্জনও করতে পারি। কারণ প্রশাসন তার আচরণে কোনোভাবেই সাধারণদের আস্থায় আনতে পারেনি। তবে বর্তমানে নির্বাচনী যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তার প্রতিফলন ডাকসুতে হলে কোনোভাবেই তা সহ্য করা হবে না। সকল সংগঠনকে নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব এবং সাধারণ শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার রক্ষা করবই।

ছাত্রলীগের প্যানেলে জিএস প্রার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে। যেখানে সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা নিরাপদ আশ্রয়টুকু পাবে। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন, আপদকালীন সমাধান হিসেবে দ্বিতল বা ত্রিতল বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরও সিঙ্গেল সিট নিশ্চিত করবে ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেল।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top