‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা থেকে মুক্তি পেতে লেগে গেল ২৫ বছর

ভারতের নাসিকের একটি আদালতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চলছিল বিশেষ একটি মামলার শুনানি। বিশেষ টাডা আদালতে ১১ জন মুসলিমের বিরুদ্ধে চলা সে শুনানিতে বিচারক উচ্চারণ করেন, পাঁচটি বিশেষ শব্দ- ‘এই আদালত আপনাদের নির্দোষ পেয়েছে।’

অভিযুক্তদের একজন বলছিলেন, বিচারকরা যখন দুই সেকেন্ডে এ পাঁচটি শব্দ বলছিলেন, তখন এক মুহূর্তে আমাদের সামনে ২৫ বছর চলে এসেছিল।

১৯৯৪ সালের মে মাসে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে জালগাও জেলার ভুশাওয়াল এলাকার পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেছিল। এই দীর্ঘ সময় ধরেই তারা চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, এ মিথ্যে অভিযোগ থেকে নিজেদের মুক্ত করার। অবশেষে সেই ক্ষণ এসে উপস্থিত হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে।

এই ২৫ বছরের কাহিনী খুব সুখদায়ক ছিল না তাদের জন্য। এ দীর্ঘ সময় ধরে তারা বয়ে চলছিলেন সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহী কার্যকলাপের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ। অথচ যাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ছিল, তারা ছিলেন, সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনজন ডাক্তার, একজন ডক্টর, একজন প্রকৌশলী, ছয়বারের জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া ব্যক্তিসহ এ অভিযুক্তের তালিকায় ছিলেন ১১ জন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালত তাদেরকে অভিযোগ থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বা বিদ্রোহী কার্যকলাপের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় টাডা (টেররিস্ট অ্যান্ড ডিসরাপটিভ অ্যাকটিভিটিস) আদালত তাদেরকে এ অভিযোগ থেকে খালাস দেন।

মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা জানান, তাদেরকে সন্ত্রাসবাদের মিথ্যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মাঝে মধ্যে তারা জামিন পেতেন। কিন্তু এ দফায় তাদেরকে পুরোপুরি খালাস দেয়া হয়।

প্রধান অভিযুক্ত জামিল আহমদ খান দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, যখন বিচারকরা আমাদের রায়ের মধ্যে পড়ছিলেন, ‘এই আদালত আপনাদের নির্দোষ পেয়েছে।’ তখন দুই সেকেন্ডে ২৫ বছরের অতীত আমার চোখের সামনে এসে পড়েছিল।

এই পাঁচটি শব্দের দ্বারা আমাদের জীবন আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরে যাবে, রাষ্ট্রের খামখেয়ালিতে ২৫ বছর ধরে যা ক্রমশই ধ্বংসের দিকে যাচ্ছিল।

আরেক অভিযুক্ত ডাক্তার ইউনুস ফালাহি বলেন, যখন আপনি সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন তখন পরিস্থিতি খুবই কঠিন হয়ে যায়। এমনকি যখন স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় দায় মুক্তির খবর ছাপা হয়, তখনও নিজেদের দোষী বলে মনে হয়। আমাদের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছিল, আমরা আত্মঘাতী বোমাহামলাকারী। আল্লাহর কসম! আমি একজন ডাক্তার। আমি কেন অন্য আরেকজনের জীবন নেয়ার চিন্তা করবো!

যদিও মিথ্যে এই অভিযোগে তাদের জীবনের মূল্যবান ২৫টি বছর নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কারো ওপর দোষ দিচ্ছেন না। তবে বলছেন, এ বিষয়টিই আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোর ব্যর্থতাই দেখিয়ে দিচ্ছে। সূত্র : সিয়াসাত ডেইলি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top