হোয়াটসঅ্যাপের কথিত একটি চ্যাট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে বালাকোটে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় ২৯২ জন ‘জঙ্গি’ মারা গেছে।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলার পর ভারত জানায়, জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির লক্ষ্য করে তারা বিমান হামলা চালিয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি কনভয়ের ওপরে হামলা চালিয়ে ৪০ জনের বেশি সিআরপিএফ সদস্যকে হত্যা করার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল পাকিস্তান ভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ।
হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে এই কথিত কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে যারা শেয়ার করেছে তারা দাবি করেছে যে এই কথোপকথন হয়েছে একজন ভারতীয় এবং তার বন্ধু বলে কথিত এক ব্যক্তি ড: ইজাজের মধ্যে, যে ড: ইজাজ থাকেন পাকিস্তানের বালাকোটে।
দাবি করা হচ্ছে যে স্ক্রিনশটে যে ব্যক্তির নাম দেখা যাচ্ছে তিনি একজন চিকিৎসক এবং কাজ করেন বালাকোটের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং বিমান হামলার সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ওই কথোপকথনে তিনি নিহতের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।
স্ক্রিনশটে কী আছে?
১ নম্বর ব্যক্তি : এটা কী? ….ভারতের এই বিমান হামলা কি সত্য ঘটনা নাকি এটা গণমাধ্যমের মিথ্যা প্রচার?
২ নম্বর ব্যক্তি : ভারতীয় বিমান বাহিনী বালাকোটের ভেতরে এবং আশপাশের এলাকায় ঢুকেছিল…কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করাটা ভুল ছিল।
১ নম্বর ব্যক্তি : হ্যাঁ, প্রায় ১২টি বিমান তো নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে গেছে…কিন্তু পাকিস্তানের জইশ-ই মোহাম্মদ যদি হামলা চালায়, ভারত তো তার জবাব দেবে…আচ্ছা, তুমি কি জানো কতজন নিহত হয়েছে?
২ নম্বর ব্যক্তি : ভাই…স্থানীয় কেউ মারা যায়নি…যারা মারা গেছে সব জঙ্গি…ওরা আমাদের ওপরেও উৎপাত চালাচ্ছিল।
কথিত কথোপকথনের এই অংশটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে।
আর এই স্ক্রিনশটে হতাহত সম্পর্কে কথিত তথ্য ও সংখ্যা দেয়া হয়েছে।
এই স্ক্রিনশটে নিহতের যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে তা ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো নিহতের যে সংখ্যা প্রচার করেছিল তার প্রায় কাছাকাছি। ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলো অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে ওই সংখ্যা প্রচার করেছিল।
বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ নিজেও দাবি করেছেন যে ভারতের বিমান হামলায় ২৫০ জন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে।
তবে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান বি এস ধানোয়া বলেছিলেন যে কতজন হতাহত হয়েছে সেটা গোণা বিমান বাহিনীর কাজ নয়।
ভারত সরকার বালাকোটের ওই বিমান হামলায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন বিবৃতি দেয়নি।
ওই মেসেজ- ঠিক নাকি ভুল?
হোয়াটস্অ্যাপের ওই মেসেজের ভিত্তিতে মানুষ দাবি করেছে বালাকোটের হামলায় ২৯২ জন ‘জঙ্গি’ মারা গেছে।
কিন্তু ওই মেসেজ কার্যত ভুয়া, কারণ আমাদের (বিবিসি) অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি পাকিস্তানের বালাকোটে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মানশেরাতে এই বালাকোট শহর। কুনহার নদীর তীরবর্তী প্রাচীন যে শহরগুলোতে এখনো সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে একটি এই বালাকোট।
পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর এই বালাকোট। এবং দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে এই বালাকোটের দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার।
পাকিস্তানের মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল জানাচ্ছে বালাকোট শহরের বাসিন্দাদের জন্য সবচেয়ে কাছের সরকারি হাসপাতালটি হলো অ্যাবোটাবাদে।
ভারতীয় বিমান হামলার পর স্থানীয়দের সঙ্গে প্রথম কথা বলেছিলেন বিবিসির একজন সংবাদদাতা মির্জা আওরাঙ্গজেব জারাল। তিনিও নিশ্চিত করেছেন বালাকোটে এধরনের কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
বিবিসির সংবাদদাতা মির্জা আওরাঙ্গজেব জারাল জানান, “বালাকোটে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সেখানে শুধু একটা মামুলি স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, যেখানে কাজ করেন মাত্র একজন ডাক্তার এবং মাত্র হাতে গোণা কয়েকজন কর্মী। সেখানে রোগী ভর্তি করারও কোনো ব্যবস্থা নেই।”
“বিমান হামলার খবরের পর আমরা বালাকোট, মানশেরা ও্ গারহি হাবিবুল্লাহর হেলথ ইউনিটে গিয়েছিলাম।কিন্তু সেখানে কোন আহত ব্যক্তিকে দেখিনি।এই সবগুলো স্বাস্থ্য কেন্দ্র যেখানে হামলা হয়েছে সেই স্থান থেকে প্রায় আধঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত,” জানিয়েছেন মির্জা আওরাঙ্গজেব জারাল।
সূত্র : বিবিসি