নামে সত্যিই অনেক কিছু আসে যায়! প্রথমে উত্তপ্ত বাদানুবাদ। তারপর জুতা খুলে দমাদম মার। প্রথম দফায় জুতা খেয়ে পাল্টা শুরু কিল, চড়চাপাটি। রাস্তার কোনো সাধারণ মানুষ নন। যুযুধান দুই পক্ষই ভারতের উত্তরপ্রদেশের শাসকদল বিজেপির জনপ্রতিনিধি। একজন সন্ত কবীর নগরের বিজেপি এমপি শারদ ত্রিপাঠি এবং অপরজন করিমনগরের বিধায়ক রাকেশ সিং বাঘেল। সরকারি বৈঠকেই পদস্থ পুলিশ অফিসারদের সামনেই তুমুল মারামারি। আর সেই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে ভাইরাল হতে সময় নেয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত স্থানীয় রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে। সন্ত কবীর নগরের জেলা সমন্বয় কমিটির বৈঠকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রসঙ্গটি ওঠে। বৈঠকে অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, আমলা এবং পুলিশ অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। হাজির ছিলেন সাংবাদিকরাও। কয়েক দিন আগেই ওই এলাকায় একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
জানা গেছে, সেই শিলান্যাসের ফলকে বিধায়ক রাকেশ বাঘেলের নাম থাকলেও এমপি রাকেশ ত্রিপাঠির নাম রাখা হয়নি। আর সেই কারণেই বেজায় চটেছিলেন বিজেপির এমপি। বৈঠকে তিনি সরাসরি বিধায়ককে প্রশ্ন করেন, কেন ভিত্তিপ্রস্তরে তার নাম রাখা হয়নি? উত্তরে বিধায়ক বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে আমার সিদ্ধান্ত। এলাকার উন্নয়নের দায়দায়িত্ব যখন আমার, তখন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে কার নাম থাকবে আর কার থাকবে না, তা ঠিক করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। স্বাভাবিকভাবেই এই উত্তর পছন্দ হয়নি এমপি রাকেশ ত্রিপাঠির। প্রবল উত্তেজিত হয়ে তিনি চিৎকার করে বলেন, ওই ফলকে তার নাম ঢোকাতে হবে। বিধায়কও স্পষ্ট জানান, নাম ফলক ইতিমধ্যেই তৈরি। কাজেই বদল করা অসম্ভব।
এই শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন সংসদ সদস্য। ভরা সভাতেই জুতা খুলে পেটাতে শুরু করেন বিধায়ককে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে হকচকিয়ে জুতোর বাড়ি খেয়েও যান বাঘেল। বিষয়টা কতদূর গড়িয়েছে বুঝেই চেয়ার ছেড়ে উঠে পাল্টা হাত চালান। এই হাতাহাতির সঙ্গে অশ্লীল গালিগালাজও চলছিল সমানতালে। দুই বিজেপি নেতার মারামারি থামাতে ছুটে আসেন উপস্থিত পুলিসকর্তারা। বিধায়ককে কিছুটা থামানো গেলেও সাংসদ তখনও রেগে লাল। পুলিশকে ঠেলে সরিয়ে বিধায়কের দিকে বারবার তেড়ে যান তিনি। শেষ পর্যন্ত দু’জনকে বাইরে বের করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পুলিস।
ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল সাইটে ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেকেই মন্তব্য করেন, দু’জন শীর্ষস্তরের নেতার এই আচরণ বরদাস্ত করা উচিত নয়। উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সূত্রে জানা গেছে, দলও ঘটনাটি বরদাস্ত করবে না। এই ‘অপমান’ হজম করতে প্রস্তুত নন বিধায়ক রাকেশ সিং বাঘেল। তার অনুগামীরা এমপিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় থানা ঘেরাও করেন। তাকে বরখাস্ত করার দাবিও উঠেছে। নিরুত্তাপ অবশ্য বিজেপির সংসদ সদস্য। নামের খোঁজে ছুটলেও ৪৭ বছরের এমপির ট্যুইটার প্রোফাইলে বড় হরফে লেখা, ‘দেশ সবার আগে’।