সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সাথে তার ছেলে ও ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। মঙ্গলবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক খবরে এ কথা বলা হয়েছে। পত্রিকাটি জানায়, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদির অংশগ্রহণসহ বেশ কিছু বিষয়ে দু’জনের মতবিরোধকে কেন্দ্র করেই তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করেছে। গত মাসে বাদশাহ সালমানের মিসর সফর থেকেই এর সূত্রপাত। সে সময় বাদশাহর উপদেষ্টারা তাকে সতর্ক করেছিলেন যে, তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন ক্রাউন প্রিন্স। তার পর থেকেই রাজপরিবারে চাপা উত্তেজনা শুরু হয়।
বাদশাহর অনুগত ব্যক্তিরা এই হুমকিকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে বেশ সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এ জন্য বাদশাহর মিসর সফরে তার নিরাপত্তার বিষয়টি বিশ্বস্ত ৩০ জনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছিল, যারা বাদশাহর সবচেয়ে অনুগত। সে সময় মিসরের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদেরও সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আগে যে দলটিকে বাদশাহর সফরকালীন দেহরক্ষীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা যুবরাজের অনুগত ছিল। তবে ওই মুখপাত্র সৌদি নিরাপত্তা পরিবর্তন নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি। মন্তব্য করেননি মিসরীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়েও। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। গার্ডিয়ানের অনুরোধে সাড়া দেয়নি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন ইন সৌদি আরবের কোনো মুখপাত্রও।
মিসর সফর শেষে বাদশাহ যখন দেশে ফেরেন তখন যেসব বিশিষ্ট লোকজন তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে এমবিএস হিসেবে পরিচিত ক্রাউন প্রিন্সকে দেখা যায়নি। এ-সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, তাকে স্বাগত জানাতে যাওয়া রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় যুবরাজের নাম নেই। বাদশাহ-যুবরাজের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে জারি করা একটা ডিক্রির প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে গার্ডিয়ানের খবরে। পত্রিকাটির খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে সব ডিক্রিই বাদশাহর নামে জারি করা হলেও ওই ডিক্রিতে উপবাদশাহ হিসেবে যুবরাজের নামে স্বাক্ষর ছিল। বাদশাহর মিসর সফরের সময় যুবরাজ ছিলেন দেশটির ‘ডেপুটি কিং’। সে সময় তিনি বড় দু’টি পরিবর্তন আনেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো একজন নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন প্রিন্সেস রিমাকে। আর তার ভাই খালিদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগে ক্ষমতাসম্পন্ন পদগুলো একই পরিবারের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়। গার্ডিয়ানের কাছে ওই সূত্র দাবি করে, এই পরিবর্তন নিয়ে বাদশাহ অবগত ছিলেন না। প্রিন্স খালিদকে এত বড় দায়িত্ব এখনই দেয়ার ব্যাপারে একমত ছিলেন না বাদশাহ।
রাজদরবারের এই নিয়োগগুলো প্রায় সব সময়ই বাদশাহর নামে ঘোষণা করা হয়; কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই ঘোষণায় স্বাক্ষর ছিল ‘ডেপুটি কিং’-এর। ওই সূত্র বলেন, বাদশাহ ও তার দল এই খবর পেয়েছিলেন টেলিভিশনের মাধ্যমে। এতে আরো বলা হয়েছে, আলজেরিয়া ও সুদানে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং একই সাথে ইয়েমেন যুদ্ধে বন্দীদের চিকিৎসার বিষয়ে বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্সের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।