দেশের অন্যতম লবণ শিল্প এলাকা কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর থেকে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক প্রায় ৫০০ বস্তা সোডিয়াম সালফেটসহ একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা।
এসময় রুম্মান ট্রেডার্স ও মেসার্স নিউ পায়রা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি নামের কয়েকটি চালান ফরম জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত বস্তাগুলোর গায়েব ‘গ্লোবাল সল্ট’ ও ‘মেড ইন চায়না’ লেখা আছে।
স্থানীয় লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপিত শামশুল আলম আজাদ জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ইসলামপুর লবণ শিল্প এলাকা থেকে কাভার্ড ভ্যানটি স্থানীয় লবণ চাষী ও জনতা জব্দ করে। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হলে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের হেফাজতে ওই কাভার্ড ভ্যানটি নিয়ে যাওয়া হয়।
লবণ মিল মালিকরা জানান, ইতোপূর্বে ইসলামপুরে সোডিয়াম সালফেট কেউ আমদানি করেনি। এই প্রথম শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এই বস্তু আমদানি করে লবণশিল্প ধ্বংসকারী চক্র। মূলত দেশীয় লবণের সাথে মিশিয়ে অধিক মুনাফার উদ্দেশ্যেই কম দামের, অথচ দেখছে লবণের মতো সোডিয়াম সালফেট আমদানি করা হয় বলেও জানান তারা।
ইসলামপুরের বেশ কয়েকজন লবণ মিল মালিক জানিয়েছে, ডিজিটাল সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোকতার আহমদ গ্লোবাল সল্টের নাম দিয়ে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করা শুরু করেছে। তার কারণে ইসলামপুরের প্রকৃত লবণ ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষুব্ধ। যেকোনো মূল্যে লবণশিল্পবিরোধী এই অপতৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো: শামসুল আলম আজাদ বলেন, ‘লবণ উৎপাদনের এই মৌসুমে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করা লবণ শিল্পের জন্য একটি অশনি সংকেত। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা না গেলে লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন তো দেখছি সোডিয়াম সালফেট মাঠে চলে আসছে।’
তিনি দুঃখের সাথে বলেন, ‘এই শিল্প এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এরই মাঝে ক্ষতিকারক সোডিয়াম সালফেট কেন আমদানি করার প্রয়োজন হচ্ছে? এই সমস্ত সাধু শয়তান কারা? কর্তৃপক্ষকে বের করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম (দাদা) মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক সোডিয়াম সালফেট আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন। তার মতে, লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও দেশের লবণশিল্প বাঁচাতে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখতে হবে।
মজুদ থাকা সত্ত্বেও লবণ আমদানি এবং সোডিয়াম সালফেট- এই দুই কারণে স্থানীয় লবণশিল্প ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: মাহবুবুর রহমান জানান, ভোজ্য লবণ ‘সোডিয়াম ক্লোরাইডে’ সর্বোচ্চ পিএইচ থাকে ৭। আর ‘সোডিয়াম সালফেটের’ পিএইচ ৯ এর উপরে থাকে। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছে।
ঈদগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয়রা আমাদের খবর দেয়ার পর আমরা গাড়িটি জব্দ করি। এটি এখন আমাদের হেফজতে রয়েছে।