নয়াদিল্লির সম্বল কেবলই অভিযোগ : কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

সাম্প্রতিক সময়ে উপমহাদেশের রাজনীতি কূটনীতিতে বড় ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তা থেকে তেমন কিছুই অর্জন করতে পারেনি ভারত। বরং গত বিশ দিনে কেবল অভিযোগের পাল্লাই ভারি করে গেছে নয়াদিল্লি। বিশ্লেষক-বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন অন্য কথা।

কাশ্মিরে আত্মঘাতী হামলার পর সৃষ্ট উত্তেজনার জেরে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই এর জবাব দিয়েছিল পাকিস্তান।

তারপর আবারো পাকিস্তানে বিমান নিয়ে ঢুকে পড়া, সেখানে দুটি বিমানের বিধ্বস্ত হওয়া, পাইলটের আটক হওয়া, নিঃশর্তভাবে তার মুক্তির ঘোষণা, নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেয়া- এসব ঘটনার কোনোটিই ভারতের পক্ষে যায়নি। এগুলোতে ভারতীয় বাহিনীর ব্যর্থতার পাশাপাশি প্রমাণিত হয় শান্তির পক্ষে পাকিস্তানের ইতিবাচকতা।

এ অবস্থায় এখন নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, ভারতে হামলা চালানোর সময় পাকিস্তান যেসব বিমান ব্যবহার করেছিল তা ছিল এফ-১৬। পাকিস্তান এ বিমান সংগ্রহ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। সে সময় দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, কেবল সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকলাপের জন্য এ যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহার করা যাবে।

ভারত সরকার দাবি করছে, পাকিস্তান হামলার সময় এ বিমান ব্যবহার করে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হচ্ছে, ওই বিমানের ব্যবহার তারা করেনি। বরং চীনের সহায়তায় নিজেদের নির্মিত জেএফ-১৭ বিমানই তারা এসব হামলায় ব্যবহার করেছে।

কিন্তু ভারত পাকিস্তানের এসব তথ্য মানতে রাজি হয়নি। তারা এ বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয়েছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বিষয়টি নিয়ে মার্কিন নিরাপদ উপদেষ্টা জন বোল্টনের সাথে কথা বলেন। সেখানে তিনি পাকিস্তানের এ চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

তারা দাবি করছেন, ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর একটি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। বিধ্বস্ত বিমানের একটি খ-িতাংশ দিয়ে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক বক্তব্য পায়নি ভারত।

এদিকে চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিবেদক আবি হাবিব। তিনি বলেন, যদি পাকিস্তান তাদের নিজেদের এলাকায় আসা কোনো বিমানকে ভূপাতিত করতে এফ-১৬ বিমান ব্যবহার করে তাহলে এর দ্বারা চুক্তির কোনো লঙ্ঘন হবে না।

এক টুইটে আবি হাবিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যদি ভারতীয় মিগ ২১ ভূপাতিত করতে পাকিস্তান এফ-১৬ ব্যবহার করে থাকে তাহলে এর দ্বারা বিমান বিক্রি বিষয়ক চুক্তির লঙ্ঘন হবে না। তারা বলছে, যদি দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং পাকিস্তান আত্মরক্ষার জন্য এফ-১৬ ব্যবহার করে, তাহলে এতে চুক্তি ভঙ্গ হবে না। তবে যদি পাকিস্তানই প্রথম আক্রমণ করত এবং তাতে এফ-১৬ বিমানটি ব্যবহার করতো তাহলে চুক্তির লঙ্ঘন হতো নিঃসন্দেহে।

অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আবি হাবিব আরো বলেন, ভারতীয় বাহিনী এআইএম-১২০ মিসাইলের যে খ-িতাংশ নিয়ে তাদের অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছে সেটি আসলে বালাকোটে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরোধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র।

তিনি বলেন, পাকিস্তান এফ-১৬ ব্যবহার করে ভারতের মিগ-২১ ভূপাতিত করার যে অভিযোগ করছে, সেটি বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি যুক্তরাষ্ট্র।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top