পাক-ভারত সংঘাতের নেপথ্যে ইসরাইল

পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে যেভাবে ভারত হামলা চালিয়েছে তাতে এতে ইসরাইলের ইন্ধন আছে বলে মনে করছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক। তার মতে, নয়াদিল্লির ওপর তেলআবিবের ক্রমবর্ধমান চাপের প্রেক্ষিতেই দুই দেশের মধ্যে এ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় এক কলামে তিনি লিখেন, যখন আমি এ হামলার ঘটনাটি শুনলাম, তখন আমি মনে করলাম, ইসরাইল বোধ হয় আবারো গাজায় হামলা চালিয়েছে। সেই আগের মতো কথা, দ্রুত বিমান হামলা চালিয়ে শত্রুঘাঁটি ধ্বংস। পরে যখন আমি দেখলাম, এটি গাজা নয়, বালাকোট; যেটি গাজা, সিরিয়া বা লেবাননে নয়, তখন আমি অবাক হয়ে গেলাম, কিভাবে ইসরাইল ও ভারত এভাবে একই রকম আক্রমণ চালায়।

‘পাকিস্তানের সাথে ভারতের সংঘাতে বড় ভূমিকা রাখছে ইসরাইল’ শিরোনামের ওই লেখায় রবার্ট ফিস্ক বলেন, পাকিস্তানের ভূখ-ে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনী যে বোমা ফেলেছে সেই বোমাগুলো আসলে ইসরাইলের তৈরি রাফায়েল স্পাইস-২০০০ নামের ‘স্মার্ট বোমা’। জিপিএস দ্বারা পরিচালিত সেই বোমাগুলো এসেছে ইসরাইল থেকে।’

তিনি বলেন, ইহুদি জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের সখ্যতার কারণে ইসরাইল থেকে যেসব অস্ত্র ভারতে আসছে সম্প্রতি সেগুলোর কিছু ব্যবহার করা হয়েছে পাকিস্তানের ভেতরে থাকা ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে।

ইসরাইল থেকে আকাশ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইলসহ বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র কিনে ২০১৭ সালে ভারত নিজেকে ইসরাইলে সবচেয়ে বড় অস্ত্রবাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রকাশিত খবরগুলোর কথাও উল্লেখ করেন এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

রবার্ট ফিস্কের মতে, পাক-ভারত উত্তেজনা উস্কে দিয়ে ইসরাইল তার অস্ত্র ব্যবসা আরও রমরমা করতে চাইছে।সেই সঙ্গে ইসরায়েলের ওপর ভারতের নির্ভরতা আরও বাড়াতে চাইছে নেতানিয়াহুর সরকার।

রবার্ট ফিস্ক বলেন, পাকিস্তান ভারতের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে অস্ত্রের ব্যবসা রমরমা করতে চাইছে ইসরাইল। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে বিদ্যমান মুসলমান বিরোধী চেতনাকে পুঁজি করতে চাইছে ইসরাইল। এর ফলে ইসরাইল ভারতের কাছে আরো অনেক বেশি অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে। একই সাথে তাদের সাথে সম্পর্কও আরো ঘনিষ্ঠ করতে বাধ্য হবে নয়াদিল্লি। তাতে বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের সমর্থন পাওয়াও তেলআবিবের জন্য সহজ হবে।

পাক-ভারত দূরত্ব সৃষ্টি করে তেলআবিবের ওপর নয়াদিল্লির নিভর্রতা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহুর সরকার কাজ করছে এমন তথ্য দিয়ে ফিস্ক বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে এবং পাক-ভারত সম্পর্ককে আরও উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিতে তৎপর রয়েছে ইসরাইল।

২০১৭ সালে ইসরাইলের অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল ভারত। ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে ভারত সে সময় ব্যয় করে ৭০ কোটি ডলার।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top