মো. আব্দুল কাইয়ুম : কিছুদিন আগেও ময়মনসিংহ শহরের ফুটপাত ছিল সৌন্দর্য্যপূর্ণ। ফুটপাতে নকশা করা টাইলস দেখে যে কেউ নগর কর্তৃপক্ষের প্রশংসা এড়াতে পারতো না। সেজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য সাবেক পৌর মেয়র ও বর্তমান সিটি প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধাতেই ময়মনসিংহ শহরে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগে। কিন্তু ফুটপাতের কিছুদিন আগের সৌন্দর্য্য এখন আর নাই। খানাখন্দকে ভরে গেছে ফুটপাত। প্রতিদিনই কেউ না কেউ ফুটপাতের ড্রেনে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে। নিশ্চিন্তে শহরের ফুটপাত দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে না শহরবাসী।
শহরের গাঙিনা পাড় হতে নতুন বাজার ট্রাফিক মোড়, টাউন হল এলাকাকে ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। সেই এলাকার প্রধান রাস্তাগুলো রিক্সা, অটো-রিক্সা, প্রাইভেটকার বা অন্যান্য যানবাহনের দখলেই থাকে সারাক্ষণ, পথচারীদের চলাচলের জন্যে তখন একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠে রাস্তার দুপাশের ফুটপাত। এদিকে ফুটপাতে অনেক সময় হকারের দখলদারিত্ব থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলে নিত্য দিনের উপহার “ফুটপাতের মরণফাঁদ”। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বেশ কয়েকবার ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হলেও তাতে আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এদিকে ব্যস্ততম ফুটপাতে যখন কারণে অকারণেই ম্যানহোলের স্লাব খুলে রাখা হয়, তখন তা যেনো হয়ে উঠে মরণফাঁদ। গাঙিনা পাড় হতে টাউনহল, এতটুকু জায়গাতেই রয়েছে ময়মনসিংহের স্বনামধন্য কয়েকটি স্কুল,কলেজ। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও অভিবাবকের পদচাজায়গাতেই
শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের ফুটপাত জুড়ে রয়েছে অসংখ্য গর্ত। আবার ফুটপাতের কোথাও ড্রেনের স্লাব নেই। আবার কোথাও স্লাব থাকলে সেখানে উঁচু নিচু। আবার কোথাও স্লাব না থাকলেও নেই ফুটপাতে চলাচলের ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ফুটপাতে চলাচলে মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। কেউ চলতি পথে ফুটপাতের ড্রেনে পড়ে মারাত্বকভাবে আহত হচ্ছে। আবার কেউ চলতি পথে হঠাৎ থমকে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে হৃদ ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
পথচারী মোহাইমীনুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহের মতো শহরের ফুটপাতে যদি নিরাপদে চলাচল করা না যায় তবে তা দুর্ভাগ্যজনক। কিছুদিন আগেও ফুটপাতগুলোতে কারুকাজপূর্ণ টাইলস দেখা যেতো। আর এখন ফুটপাতগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। যা আমরা ময়মনসিংহবাসী আশা করছিনা। সিটি প্রশাসকের হস্তক্ষেপওে চান তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল হক বলেন, এ শহরে প্রতিদিন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজারো শিক্ষার্থী নিত্যদিনের কাজে আসে। কিন্তু ইদানিং ফুটপাতের ম্যানহোলের গর্তে পড়ে আমাদের কয়েকজন বন্ধুও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। পড়নের কাপড়চোপড় ও নষ্ট হয়েছে। যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও হতাশাজনক।
শহরের সাহেব আলী রোডের ৭৫ বছর বয়সী আলিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ফুটপাতে উঁচু নিচু স্লাব ও গর্ত থাকায় আমি ফুটপাতে চলাচল নিরাপদ মনে করিনা। বয়স্ক মানুষ হওয়ায় চলাচলে কখন যেন হোচট খেয়ে পড়ে যাই, আমার পরিবার সর্বদায় টেনশনে থাকে।
আনন্দমোহন কলেজের এক সহযোগী অধ্যাপক জানান, ময়মনসিংহ জেলার সকল সচেতন মানুষ এ শহরে বসবাস করে। এ শহরটি বিভাগীয় শহর হওয়ায় বিভাগীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকেই নিয়মিত চলাফেরা করতে হয় শহরের রাস্তায়। কিন্তু কারো চোখেই কি ফুটপাতের এমন দুর্দশা চোখে পড়ে না? একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা না থাকলে গুটি কয়েকজনের চেষ্টা বৃথা বলেও জানান তিনি।
এদিকে শহরের ফুটপাতে ম্যানহোল ও উঁচুনিচু গর্ত আতঙ্ক থেকে স্বস্তিতে চলাফেরায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সিটি প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন শহরবাসী।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কিছু ছবি দেয়া হলো