জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার নতুন পরিকল্পনা ঐক্যফ্রন্টের

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র বিরুদ্ধে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা ও গণশুনানির পর নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের একাধিক নেতা বলেছেন, এসব কর্মসূচিতে ভোটবঞ্চিত জনগণকে সম্পৃক্ত করে জোরালোভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলে ধরা হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. আব্দুল মঈন খান  বলেন, এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে নির্বাচনে ভোট ডাকাতির বিষয়টি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে উঠে আসা অনিয়মের বিস্তৃত তথ্য জনগণ অবহিত হয়েছে। এমন একটি নির্বাচন করা হয়েছে, যেখানে জনগণকে ভোট প্রদানের অধিকার থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করা হয়েছে। শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকেরাও ভোট দিতে পারেনি। এমনভাবে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার নজির বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই।

মঈন খান বলেন, প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদ বৈধ নয়। তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। এ জন্য অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট জনগণকে সাথে নিয়ে এ দাবিতে সোচ্চার থাকবে।

ফ্রন্টের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন কর্মসূচি হিসেবে ভোটবঞ্চিতদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হতে পারে। যার মধ্য দিয়ে বিতর্কিত ওই নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিতে পারেনি, তা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া আরো কিছু কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।

ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জ করে ধানের শীষের রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী মামলা করেছেন। গণহারে এমন মামলা আগে কখনো হয়নি। এরপর ফ্রন্টের গণশুনানিতে নির্বাচনে অনিয়মের কথা প্রমাণসহ বর্ণনা করেছেন প্রার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে ভোট ডাকাতির সামগ্রিক কলাকৌশল বেরিয়ে এসেছে। ওই নেতা আরো বলেন, নির্বাচনে যে ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে, সেটি ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়েছে। এবার তারা ভোটারদের কাছে যাবেন। তারাই বলবেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।

ফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি গ্রহণের পথ ধরেই তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন। ধীরে ধীরে কর্মসূচির ধরনও পরিবর্তিত হতে থাকবে।

গত মাসে এক অনুষ্ঠানে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনও বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূরণের আগেই সংবিধানসম্মত সরকার গঠন করার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার ঈঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ জন্মশতবার্ষিকী পালন করবে। এর মধ্যেই সংবিধানসম্মত জনগণের সরকার প্রয়োজন।
জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে ধানের শীষের ৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচন পিটিশন দায়ের করেছেন। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানিয়েছেন, হাইকোর্টের ছয়টি বেঞ্চে তারা শুনানি করবেন। ইতোমধ্যে অনিয়মের সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।

নির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শুক্রবার গণশুনানি করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এতে জেলাওয়ারি ৪১ জন প্রার্থী অনিয়মের বর্ণনা দিয়েছেন। ফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, প্রার্থীরা যেভাবে অনিয়মের বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে একটি প্রহসনের নির্বাচনের চিত্রই ফুটে উঠেছে।

ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু জানিয়েছেন, ২২ ফেব্রুয়ারির গণশুনানিতে প্রার্থীসহ সবার বক্তব্য ও নির্যাতিত নারীদের বর্ণনা একত্র করে লেখা হচ্ছে। ২৯ ও ৩০ তারিখের ভোট ডাকাতির তথ্য আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বই আকারে প্রকাশ করে সারা দেশে প্রচার করা হবে। জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে গণশুনানি বা নাগরিক সংলাপের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে।
জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও ঐক্য গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ফ্রন্টের গণশুনানিতে বেশ কয়েকটি বাম দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। তাদের মধ্যে ছিলেন- সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান, বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ (মুবিনুল) নেতা মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, সুধাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের মোশাররফ হোসেন নান্নু এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। বাম নেতারা গণশুনানিতে না গেলেও তাদের সাথে কর্মসূচি পালনের ঐক্য গড়ে উঠতে পারে বলে ফ্রন্টের এক নেতা জানান।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এক নেতা বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে না গেলেও রাজপথে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠলে তখন ঐক্য হতেই পারে।
কূটনীতিকদের সাথে ড. কামালের বৈঠক : মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকের সাথে গতকাল সোমবার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গুলশান-২ নম্বরে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের বাসায় এ বৈঠক হয়।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ ফ্রন্টের নেতারা অংশ নেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছাড়াও কূটনীতিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার ও জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বৈঠকে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অনিয়মের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তাদের জানিয়েছেন ফ্রন্টের নেতারা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top