‘ছক্কা’ হলো ক্রিকেট জগতে বোলারদের উপর ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় চপেটাঘাত। আর এই আঘাত খেয়ে কারো হয়েছে ক্ষতি আবার কেউ পেয়েছেন খ্যাতি। ২২ গজের পিচে বোলারদের তুলোধুনো করতে ওস্তাদ- এমন ব্যাটসম্যান হাতেগোনা কয়েকজন। আর এই ছক্কা মেরেই তারা ক্রিকেট দুনিয়ায় খ্যাতি কুড়িয়েছেন।
ছক্কার রাজ্যের রাজাদের নাম যদি বলা হয়, তবে সর্বপ্রথম আসে ‘ক্রিকেট দানব’ খ্যাত এক ক্রিকেটারের নাম। যিনি ব্যাটে ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে ক্রিকেট রাজ্যে বনে গেছেন দানবে! এই মানুষটি আর কেউ নন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম ওপেনার ব্যাটসম্যান হেনরি ক্রিস গেইল। মাত্র কয়েকদিন আগেই তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ডটি নিজের করে নেন গেইল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৭৬ টি ছক্কা মেরে সবার উপরে ছিলেন পাকিস্তানের হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু ক্রিকেট দানব গেইল সেই রেকর্ড ভেঙ্গে ইতিমধ্যে নিজের নামের সাথে বসিয়ে নিয়েছে ৪৯২টি ছক্কা। এই ছক্কাগুলো মারতে গেইলকে খেলতে হয়েছে ৪৪৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ (৫১৫ ইনিংস)। গেইল ১০৩ টেস্ট ম্যাচে ১৮২ ইনিংসে ৯৮টি ছক্কা হাঁকান। ২৮৬ ওডিআই ম্যাচে ২৮১ ইনিংস ব্যাট করে ২৯১টি ছক্কা মারেন। আর ক্রিকেটের স্বল্প আসর টি-টোয়েন্টিতে ৫৬ ম্যাচে ৫২ ইনিংসে ব্যাট করে ছক্কা হাঁকান ১০৩টি। এছাড়া বিভিন্ন ঘরোয়া লিগগুলোতে গেইলের ছক্কা রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চেয়ে বেশি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ১১২ ম্যাচে ২৯২ ছক্কা রয়েছে তার। ক্যারিবিয়ান সুপার লিগে ৬ ম্যাচে ২৪ টি ছক্কসহ বিগ ব্যাশ, পিএসএল, বিপিএল ও অন্যান্য ঘরোয়া লিগে গেইলের ছক্কার জুড়ি নেই।
ক্রিকেট দানবের পরে যার নামটি আসে ছাক্কার রাজ্যের রাজদের, তিনি হলেন, ‘বুম বুম’ খ্যাত শহিদ আফ্রিদি। বোলারদের ছক্কা মেরে ১৬০মিটার পর্যন্ত বল আছড়ে ফেলেছেন এই ক্রিকেটার। বোলারদের উপর এমন ঝড় বইয়ে দেওয়ার কারণেই তার নামের সঙ্গে ক্রিকেটবোদ্ধারা জুড়ে দেন ‘বুম বুম’। ক্রিস গেইল রেকর্ডটি ভাঙ্গার পূর্ব পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড ছিল আফ্রিদির দখলে। এই ব্যাটসম্যান ৫২৪ ম্যাচে ৫০৮ ইনিংস ব্যাট করে ৪৭৬ টি ছক্কা হাঁকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ২৭ টেস্টে ৪৮ ইনিংসে হাঁকান ৫২ টি ছক্কা। ৩৬৯ ওডিআই ম্যাচে ৩৫১ ইনিংসে ব্যাট করে মারেন ৩৫১টি ছক্কা। ৯৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ৯১ ইনিংস ব্যাট করে মারেন ৭৩টি ছক্কা।
তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, গেইল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে ছক্কা মেরে আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে গেলেও এক জায়গায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছেন ছক্কার দিক থেকে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি নিজের দখলে করে নিলেও ওডিআইতে আফ্রিদির চেয়ে এখনো ৬০টি ছক্কা পিছিয়ে আছে গেইল। আর বিশ্বকাপের পর অবসরের ঘোষণা যদি সত্যি হয় তবে গেইলের জন্য আফ্রিদির ওডিআইতে ছক্কার রেকর্ডটি ভাঙ্গা নিয়ে সংশয় থাকতে পারে। তবে ক্রিকেট দানব চাইলে এই রেকর্ডও ভাঙা অসম্ভব কিছু না। তারপরও ওডিআইতে এখন পর্যন্ত ছক্কার রাজ্যে আফ্রিদেই ‘বস’ এটি মানতে হবে।
আফ্রিদি ক্যারিয়ারের শেষ ওডিআই ম্যাচ খেলেছেন ২০১৫ সালের মার্চে, যা প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু এতদিনেও তার রেকর্ডটি অক্ষত রয়েছে।
গেইল ও আফ্রিদির পরেই রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। এই ক্রিকেটার ৪৩২ ম্যাচে ৪৭৪ ইনিংস ব্যাট করে হাঁকান ৩৯৮ টি ছক্কা। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। এরপরই রয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক মারকুটে ওপেনার সনৎ জয়সুরিয়া। জয়সুরিয়া ৫৮৬ ম্যাচে ৬৫১ ইনিংসে মারেন ৩৫২টি ছক্কা। তারপরই রয়েছেন ভারতের ইতিহাস সেরা অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ৫২৫ ম্যাচে ৫১৪ ইনিংস ব্যাট করে মারেন ৩৪৯টি ছক্কা।
ব্যাটসম্যান – ম্যাচ – ইনিংস – ছক্কা
ক্রিস গেইল – ৪৪৫ – ৫১৫ – ৪৯২
শহীদ আফ্রিদি – ৫২৪ – ৫০৮ – ৪৭৬
ম্যাককালাম – ৪৩২ – ৪৭৪ – ৩৯৮
জয়সুরিয়া – ৫৮৬ – ৬৫১ – ৩৫২
এমএস ধোনি – ৫২৫ – ৫১৪ – ৩৪৩