বাংলাদেশে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ভেদ করে কোনো ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে কিভাবে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উঠতে পেরেছে, তা নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় উঠেছে।সামাজিক মাধ্যমেও অনেকে নানা প্রশ্ন তুলেছেন।
বিমান মন্ত্রনালয় ঘটনার ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে বিমান চলাচল বিষয়ে বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম মনে করেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দুর্বলতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
একই সাথে তিনি বলেছেন, “শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দুর্বলতা নিয়ে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উঠে তা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। এমন ঘটনায় মানুষ আশ্চর্য হয়েছে এবং সে কারণে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।”
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তা ইস্যুতেই সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন।
তাঁর বক্তব্য ছিল একটাই, তা হচ্ছে, “আমরা তদন্ত করব। সিসিটিভি আছে, সেটি চেক করব। আমাদের মেশিনে সিসিটিভি আছে, সবগুলো চেক করব।কারণ এই মেশিনের ভিতর দিয়ে যদি নেইল কার্টার,খেলনা পিস্তল, ছুরি ধরা পড়তে পারে, তাহলে এগুলো ধরা হবে না, জিনিসটা খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। তদন্ত হোক তাহলে দেখা যাবে।”
এত সিসি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তার মাঝে অস্ত্র নিয়ে কোনো ব্যক্তি কিভাবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উঠে পড়লো, সেই প্রশ্নই এখন উঠছে।
বিমানবন্দরে এত সিসি ক্যামেরা, একাধিক স্ক্যানিং মেশিন এবং গোয়েন্দা নজরদারি-এগুলো কিভাবে ব্যর্থ হলো?
বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেছেন, নিরাপত্তার ঘাটতি হয়েছে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
“কোনো না কোনো ভাবেই হোক নিরাপত্তা ঘাটতি হয়েছে। সেটা স্ক্যানিং মেশিনে হোক বা ঘটনার পেছনে কেউ থাকুক, বা অন্য কোনো বিষয় থাকুক, নিরাপত্তার সিরিয়াস ঘাটতি হয়েছে।”
বিষয়টাতে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করার কথাই তুলে ধরছে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী
কাজী ওয়াহিদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশ বিমানের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বা সিলেট হয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে থাকে। এসব ফ্লাইটে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী নেয়া হয়। সেখানেই নিরাপত্তার ঘাটতি থাকে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন, এমন ফ্লাইটে ঢাকায় আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী উঠছে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল থেকে এবং অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে উঠছে অভ্যন্তরীন যাত্রীরা।এই দুই জায়গা থেকে যাত্রী উঠনোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঘাটতি থাকতে পারে।
মি: হক বলেছেন, আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে। কিছুটা ফারাক থাকতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের দেহ তলালাশি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের চেক বা নিরাপত্তা পরীক্ষা বেশি করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যে ফ্লাইটটি ছানতাইয়ের চেষ্টা হয়েছিল, সেটির গন্তব্য ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই।
এই ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকেও যাত্রী নেয়া হয়েছিল বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সূত্রগুলো বলছে।
এই সূত্রগুলো উল্লেখ করছে, বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে নিহত ব্যক্তি অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে উঠেছিল কিনা, তাও তদন্ত করা হবে।
ঘটনাটি আন্তর্জাতিক পরিসরে কি বার্তা দেবে?
বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল হক মনে করেন, এই ঘটনা বহিঃবিশ্বে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।এটি বিশ্বে একটি খারাপ বার্তা দেবে।
তিনি এরআগে ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যের সরাসরি মালবাহী বিমান বা কার্গো চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়কে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাজ্য নিরাপত্তার দুর্বলতার অজুহাতে ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিল।
এরপর দুই বছর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন করা হলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে ঢাকা থেকে কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল।
হক বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া মানে এই নয় যে, তারা সারাজীবনের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে। এটার আরও আধুনিক যে সব ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিল বা ডিজিটাল ব্যবস্থা আরও উন্নত করা উচিত ছিল।এসব বিষয়েও এখন প্রশ্ন এসে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বিষয়টা এখন বাংলাদেশ কিভাবে সামাল দিতে পারে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিমান ছিনতাইয়ের এই চেষ্টার ঘটনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা উচিত।
সেই তদন্তের মাধ্যমে দুর্বলতা বা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে, সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেগুলো দৃশ্যমান করতে হবে বিদেশী এয়ারলাইন্স বা বিশ্বের সামনে। আসলে আস্থা অর্জনের জন্য এখন কাজ করতে হবে।
সূত্র : বিবিসি