প্রকাশকের হোল্ডিং নম্বর না থাকায় একুশে বইমেলা থেকে ধর্মীয় বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা একটি বই সরিয়ে নিতে বলেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২ নামের বইটি ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বইমেলায় বিক্রি হচ্ছিল। বইটি লিখেছেন আরিফ আজাদ।
বইটি প্রকাশ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ৮ হাজার কপির বেশি বিক্রি হয়ে গেছে বলে প্রকাশনা সংস্থাটি জানিয়েছে। অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় রয়েছে এই বইটি।
লেখক আরিফ আজাদ বলেন, ”আমার বইটা মেলায় এসেছে ১৫ তারিখে। তারপর থেকেই সেটার খুব চাহিদা ছিল, প্রতিদিনই বইটা স্টক আউট হয়ে যাচ্ছিল। গতকাল বাংলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা এসে প্রথমে বইটা দেখতে চান। এরপর তিনি বলেন, আপনারা আর এই বইটা বিক্রি করবেন না। যখন তার কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলো, তখন তিনি বলছেন, প্রকাশনী অফিসের হোল্ডিং নম্বর নেই, তাই এখানে বিক্রি করা যাবে না।”
ঠিকানা কেন দেয়া হয়নি, সেটা জানতে চাইলে প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান সমকালীন প্রকাশনীর কর্মকর্তা এস এম আখতারুল হক বলছেন, ”হোল্ডিং নম্বরটা আসলে ভুলে বাদ পড়ে গেছে। আমাদের সবগুলো বইতেই সেটা বাদ পড়েছে। এ কারণে পুরো মেলাতেই আমাদের বই বিক্রি বন্ধ রেখেছি।”
বইটি কী নিয়ে
মূলত ইসলাম ধর্মের নানা বিষয়ে ব্লগিং বা বিভিন্ন ফোরামে যেসব আলোচনা- সমালোচনা করা হয়, সেসব প্রসঙ্গ ধরে যুক্তি খণ্ডন বা ব্যাখ্যা আকারে বইটি লেখা হয়েছে। ২০১৭ সালে ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ নামে এর প্রথম পর্বটি প্রকাশিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এই দ্বিতীয় বইটি লেখা হয়েছে।
অনলাইন বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘রকমারি’ ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, সেই বইটি এখনো তাদের বিক্রি তালিকার শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় বইটিও রয়েছে বিক্রিত বইয়ের তালিকার শীর্ষে।
লেখক আরিফ আজাদ বলেন, ইসলাম ধর্ম কেন্দ্রিক একটি বইয়ের এত বিক্রির কারণে কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে হয়তো বাংলা একাডেমির কাছে অভিযোগ করেছে। তবে তার দাবি, বিতর্ক বা কারো জন্য ক্ষতিকর কোন বক্তব্য তার বইয়ে নেই। এর আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ রয়েছে, বইমেলা থেকে এমন বই সরিয়ে নিতে বলার উদাহরণ রয়েছে। ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করে লেখা বইয়ের কারণে মেলায় প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেয়া এবং মামলার ঘটনাও ঘটেছে।
তবে ইসলামের পক্ষে নানা ব্যাখ্যা সমন্বিত বই সরিয়ে নিতে বলার কোন ঘটনা এর আগে জানা যায়নি।
বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, বইয়ের বিষয় নয় বরঞ্চ প্রকাশনীর নাম-ঠিকানা ঠিকভাবে না থাকার কারণেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলছেন, “ভেতরে কনটেন্ট কি আছে সেটা নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। তবে যেকোনো প্রকাশনীর পুরো ঠিকানা বইয়ে থাকতে হবে। তাদের বইয়ে যেহেতু সেটা নেই, তাই মেলায় বইটি বিক্রি করতে মানা করা হয়েছে। নিয়ম তো সবাইকে মানতে হবে।”
কিন্তু বাংলা একাডেমির সব বইয়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ম মানা হয় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, ”আমার সব ক্ষেত্রেই নজরদারি করছি। তবে সব আমাদের হয়তো নজরে আসেনা। কিন্তু যেগুলো নজরে আসে, সেসব ক্ষেত্রে তো ব্যবস্থা নিতেই হবে।”
প্রকাশনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে ভবিষ্যতে সংশোধন করে নেয়ার শর্তে মেলায় সুযোগ দেয়ার জন্য তারা আবেদন করেছেন।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।